পাঁচ দিন আগে অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরেছিলেন রিমন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু তাসপিয়া হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত মো. রিমন
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বাবার কোলে শিশুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. রিমন (২৫) ঘটনার পাঁচ দিন আগে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর তলপেটে লাথি মেরেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওই নারীর পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

এ ছাড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. আজিমের অভিযোগ, পুলিশ ও র‍্যাবকে তিনি দুই দিন আগেও সন্ত্রাসী রিমন ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কেউই তাঁর অভিযোগে কর্ণপাত করেনি। ফলে রিমনের হাতে একটি শিশুর প্রাণ দিতে হয়েছে।

অন্তঃসত্ত্বা যে নারীকে লাথি দিয়েছেন রিমন, তাঁর বাবা হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁর ভাই খুরশিদ আলম তাঁদের একটি জমির মাটি বিক্রি করেন একই এলাকার মো. বাদশার কাছে। মাটি কেটে নেওয়ার সময় ছয় ফুট গভীর করে মাটি কাটেন বাদশা। তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এর জের ধরে বাদশা পাঁচ দিন আগে রিমন, মহিনসহ একদল সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে তাঁর বাড়িতে গুলি করেন ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।

ফিরোজ আলমের অভিযোগ, ঘটনার সময় তাঁর চারজন মেয়ে এগিয়ে এলে অন্তঃসত্ত্বা একজন মেয়ের তলপেটে লাথি দেন রিমন। আরেক মেয়ের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় তাঁকেও মারধর করেন রিমন। তিনি ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার পর উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি গুলির খোসাও উদ্ধার করেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর তলপেটে লাথি মারার অভিযোগের বিষয়ে চেষ্টা করেও রিমনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই রিমন ও তাঁর সহযোগীদের ছোড়া গুলিতে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার হাজীপুর গ্রামে বাবা আবু জাহেরের কোলে গুলিবিদ্ধ হন তাঁর চার বছর বয়সী শিশু তাসপিয়া আক্তার ওরফে জান্নাত। একই ঘটনায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন সদ্য বিদেশফেরত আবু জাহেরও। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন।

বাবার কোলে শিশুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বেগমগঞ্জে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাজীপুর গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, রিমনের গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুরে। কিন্তু রিমনের আড্ডা হাজীপুর ইউনিয়নে। হাজীপুর ইউনিয়নে রিমন ও তাঁর সহযোগী মহিন, রহিম, বাদশাসহ ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। এই গ্রুপ এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবসা করে। এলাকায় কারও সঙ্গে তুচ্ছ কোনো ঘটনা ঘটলে তারা একটি পক্ষ নিয়ে অন্যদের ওপর চড়াও হওয়া, বাড়িঘরে হামলা করে এবং জিম্মি করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রিমন ও তাঁর সহযোগীরা সরাসরি দলীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনুসারী। এ কারণে এলাকার মানুষজনও তাঁদের ভয়ে মুখ খুলতে চান না।

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. আজিম অভিযোগ করেন, রিমন ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা গোটা হাজীপুরকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। তাঁদের কাছে এলাকার মানুষজন জিম্মি অবস্থায় আছে। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে অনুরোধ করলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের নীরবতার জন্যই শিশুটিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

তবে রিমন ও তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল খোরশেদ। তিনি বলেন, রিমনসহ যেসব সন্ত্রাসীর নাম আলোচনায় এসেছে, তাঁরা কেউই আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাঁরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁদের হাতে পুরো হাজীপুরের মানুষ জিম্মি। তিনি এসব সন্ত্রাসীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক বলেন, রিমনের বিরুদ্ধে থানায় ইতিপূর্বে আটটি মামলা আছে। প্রায় সব কটি মামলাই মারামারির। পাঁচ দিন আগে ফিরোজ আলমের বাড়িতে ককটেল হামলা ও গুলির বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার কথা সঠিক নয়। রিমনসহ হাজীপুর ও সংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আজিম কখনো হাজীপুরের সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।