সব জল্পনা-কল্পনা ও প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন না করে নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। তাঁকে আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। তবে আহ্বায়ক কমিটিতে নাম নেই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৮৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। এতে তিনি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীকে। আর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিনকে (শাহিন) এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. শহিদ উল্যাহ খানকে।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি বাতিল ও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এদিকে আহ্বায়ক কমিটিতে সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ছাড়াও জেলার অপর চার সাংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁরা হলেন এ এইচ এম ইব্রাহিম, মোরশেদ আলম, মামুনুর রশিদ কিরণ ও আয়েশা ফেরদাউস। সদস্য করা হয়েছে হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীকে।
তবে নতুন গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে নাম নেই প্রস্তাবিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সবচেয়ে সোচ্চার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার। নিজের নাম না থাকা নিয়ে সরাসরি কোনো কথা না বললেও জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে ‘বানরের পিঠা ভাগ’ বলে মন্তব্য করেছেন কাদের মির্জা। আজ দুপুরে নিজের ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফেসবুক লাইভে কাদের মির্জা দাবি করেন, ‘এই কমিটির মাধ্যমে নোয়াখালী আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন হয়নি। এই কমিটি হচ্ছে অপরাজনীতির আরও একটি চমক। আমরা এই কমিটির সঙ্গেও নাই। বিপক্ষেও নাই। আমি বঙ্গবন্ধুকে, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাজনীতি করি। দলের প্রতি আমার কোনো ভক্তি নাই। ওবায়দুল কাদের সাহেবদের মতো নেতৃত্বে আমার দল করার মতো কোনো পরিবেশ নাই। বারবার অপমান। আমার পরিবারের ইজ্জত নষ্ট করেছে। আমার ইজ্জত নষ্ট করেছে। ৯ বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।’
২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংঘাতপূর্ণ ওই সম্মেলনের প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীকে সভাপতি ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে যান।
সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস পর ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। তিনি কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি তোলেন এবং এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বক্তৃতায় কমিটি নিয়ে কথা বলেন।