নেত্রকোনায় বন্যার পর বাজারে সবজির ঘাটতি, দাম চড়া
নেত্রকোনায় সবজির বাজারেও বন্যার প্রভাব পড়েছে। ভারী বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে জেলার সবজির খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারগুলোতে শাকসবজি সরবরাহ কম। এতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার বাইরে থেকে সবজি আমদানি করতে হচ্ছে বলে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
আজ সোমবার সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত শহরের ঘুষেরবাজার, মাছবাজার, আখড়াবাজার, রেলক্রসিং বাজার, নাগড়া আনন্দবাজারসহ বেশ কটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাজর ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঝিঙা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
সাতপাই রেলক্রসিং বাজারে সবজি বিক্রেতার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। সকাল সাতটার দিকে প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ীকে সবজি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। অথচ এই বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী নিয়মিত সবজি বিক্রি করতেন।
দাম বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। ঘুষেরবাজারে সবজি কিনতে এসেছেন শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে বাজারে সবজি নেই বললেই চলে। যাও পাওয়া যায়, দাম খুব বেশি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।’
ব্যবসায়ীরা দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসস্তুষ্টি দেখা গেছে। সবজি কিনতে আসা কলেজ রোড এলাকার সালাউদ্দিন খান বলেন, ‘শাকসবজির পাশাপাশি হঠাৎ করে মরিচের দামও অনেক বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ কিনেছিলাম। আজ ২৫০ গ্রাম কিনলাম ২৫ টাকায়। তার মানে কেজিপ্রতি পড়ছে ১২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। তাই সবকিছু অল্প অল্প করে কিনলাম।’
এর আগে সাতপাই রেলক্রসিং বাজারে সবজি বিক্রেতার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। সকাল সাতটার দিকে প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ীকে সবজি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। অথচ এই বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী নিয়মিত সবজি বিক্রি করতেন। এর বাইরেও বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে আসতেন। তবে বন্যার পর থেকে ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে।
জানতে চাইলে রেলক্রসিং বাজারের সবজি বিক্রেতা ইয়াসিন মিয়া বলেন, বন্যার কারণে সব শাকসবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। আড়ত থেকে বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। আড়তেই প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ায় বাজারে ক্রেতাও কমে গেছে। তাই বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছেন।
মাছবাজার সুপার মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি আর বন্যার কারণে খেতে সব গাছ মরে গেছে। মোকামে সরবরাহ কমে যাওয়ায় অন্য জেলা থেকে সবজি নিয়ে আসতে হচ্ছে। এ জন্য কিছুটা বেশি দাম।
তবে বাজার করতে আসা কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বন্যার দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। এসব সবজি তো সারা দেশেই চাষ হয়। আর সারা বছরই বেশির ভাগ সবজি অন্য জেলা থেকে আমদানি করা হয়। তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিং দরকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. শাহজাহান সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় বন্যায় ১ হাজার ৭৫৬ হেক্টর আউশ, পাট ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৮ হেক্টর সবজি খেত রয়েছে। তবে এখন পানি নামতে শুরু করেছে। নতুন করে সবজি আবাদ করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
জেলার বন্যা পরিস্থিতি
নেত্রকোনার মদনের ফতেপুর, গোবিন্দশ্রী ও তিয়োশ্রী ইউনিয়ন; খালিয়াজুরির মেন্দিপুর, গাজীপুর, চাকুয়া, কৃষ্ণপুরসহ ছয়টি ইউনিয়ন ও মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর, মাঘান সিয়াধাসহ পাঁচটি ইউনিয়নে এখনো পানি রয়েছে। এ ছাড়া কলমাকান্দার কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন ও সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা ছাড়া অন্য চারটি ইউনিয়নের বন্যার পানি নেমে গেছে। অন্য উপজেলাগুলোর নিচু এলাকাগুলোতে এখনো বন্যার পানি রয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ২৯ হাজার ৯২৮ জন অবস্থান করছেন। ৬৫টি ইউনিয়নে পানিবন্দী ৮৭ হাজার ১৪৮টি পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার মানুষকে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলছেন এই সংখ্যা আরও বাড়বে। বন্যার পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত বন্যার্তদের ৫৫৯ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৬ হাজার ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।