নেত্রকোনায় চারদিকে থই থই পানি, ডিঙি বানানোর ধুম
নেত্রকোনার বেশির ভাগ এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার পর চলাচলের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকা। এখন ছোট ছোট ডিঙি বানানোর হিড়িক পড়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়। জেলার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৮টি ইউনিয়ন এখনো বন্যাকবলিত। ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দী আছে আরও ১০ লাখের ওপরে মানুষ।
এক সপ্তাহ ধরে কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নৌকা বানানোর দৃশ্য দেখা যায়। নৌকা বানানোর কারিগরেরা বলেন, বন্যায় তাঁদের বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। চাহিদা বাড়ায় কাঠ ও লোহা সংগ্রহ করে নৌকা বানাচ্ছেন তাঁরা। বেশির ভাগ কারিগরই ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাহিদা থাকায় এসব নৌকা বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও কলমাকান্দার আংশিক এলাকা মূলত হাওরাঞ্চল। এসব এলাকায় বছরে প্রায় ছয় মাস পানি থাকে। তাই সেখানে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘদিনের। নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় থাকায় সারা বছরেই নৌকা ব্যবহার করেন ওই অঞ্চলের লোকজন। যাঁরা নৌকা ব্যবহার করেন, তাঁরা বর্ষা শুরুর আগেই তা তৈরি করে নেন। কিন্তু এবার সারা জেলায় বন্যার পানি চলে আসায় যাতায়াতের বাহন হিসেবে ডিঙির চাহিদা বেড়েছে।
গতকাল বুধবার কলমাকান্দার পাগলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণ বিশ্বশর্মা, জুয়েল বিশ্বশর্মাসহ অন্তত ছয়জন কারিগর ডিঙি তৈরি করছেন। তাঁরা বলেন, কৈলাটি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে মানুষ পানিবন্দী। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। অনেকেই কাঠ, লোহাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে দিয়েছেন। শুধু মজুরি দিচ্ছেন। আবার অনেকেই নৌকা কিনে নিচ্ছেন। ছোট একটি নৌকা পাঁচ-আট হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মদনের বাগজান গ্রামের ফয়েজ আহমেদ বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। কিছুটা কমলেও বসতঘরের পাশে পানি আছে। ঘর থেকে বের হতেই নৌকার প্রয়োজন। তাই চলাফেরার জন্য নৌকা তৈরি করছি। খরচ একটু বেশি হলেও কোনো উপায় নেই।
খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সামনে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১২ কারিগর নৌকা বানাচ্ছেন। দুজন শ্রমিক নৌকায় আলকাতরা লাগাচ্ছেন।
কারিগর পরিতোষ সরকার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন একসঙ্গে হইয়া কাঠসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ কইরা নৌকা বানাইতাছি। এই গত শনিবার থাইক্কা এ পর্যন্ত ১০০টির বেশি ডিঙি নৌকা বানাইয়া বিক্রি করেছি। কাঠের মানসহ প্রকারভেদে পাঁচ-আট হাজার টাকায় একটি নৌকা বিক্রি করা হচ্ছে।’