নেত্রকোনায় এখনো পানিবন্দী ৬৪ হাজার পরিবার, আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ হাজার মানুষ
নেত্রকোনার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো তলিয়ে আছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এ কারণে অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি। মদন, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, আটপাড়া ও কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে।
জেলা-উপজেলার মূল সড়কগুলো থেকে পানি নামলেও ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে প্লাবিত। এ কারণে সড়ক যোগাযোগ সচল হয়নি।
আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও কলমাকান্দার আংশিক এলাকা ছাড়াও বারহাট্টা ও আটপাড়া উপজেলা মিলিয়ে এখনো ৬৪ হাজার ৮৬৬টি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। ৬৫টি ইউনিয়নে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ হাজার ৫৯৯ জন রয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬০৮ জন নারী, ১০ হাজার ৭৯৫ জন পুরুষ, ২ হাজার ৯০৬টি শিশু ও ২৯০ জন প্রতিবন্ধী। মানুষের পাশাপাশি এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার গবাদিপশুসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী রয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, কিছু নিম্নাঞ্চল ছাড়া অন্য এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় গত শনিবার থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরেছে। যাদের বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি রয়েছে বা বন্যায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।
বন্যার্তদের ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যায় ১০টি উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯৩ মেট্রিক টন চাল, ৫৩ লাখ টাকা ও ৬ হাজার ৮৫০ প্যাকেট খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৫৮৫ মেট্রিক টন চাল, ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৬ হাজার ৪৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে বলেন, জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধনুসহ ছোট–বড় সব নদ–নদীর পানি চার দিন ধরে দ্রুত কমতে শুরু করছে। তবে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দুটি পয়েন্টের বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।
বন্যার পানি কমলেও উপজেলা অধিকাংশ এলাকার গ্রামীণ সড়ক এখনো পানির নিচে। যেসব সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে, তা স্থানে স্থানে বিধ্বস্ত। গতকাল সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। সোমেশ্বরী নদীর তীরঘেঁষা গাঁওকান্দিয়া গ্রামের সামনের পাকা সড়কটির অন্তত ২০টি স্থানে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো গর্তের গভীরতা ২০ থেকে ৩০ ফুট।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৭ জুন সকালে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা আকস্মিক ঢলে সোমেশ্বরী নদী উপচে পানি গাঁওকান্দিয়া সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানির চাপে সড়ক ভেঙে শত শত বসতবাড়ির বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেক মানুষ এখন নিঃস্ব। ওই গ্রামের আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘মাত্র এক ঘণ্টার স্রোতে আমার বাড়ির দুটি ঘরই ভেঙে নিয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া এখন বাড়িতে কিছুই নেই।’ গ্রামের পল্লিচিকিৎসক ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘নদী থেকে আমার এই বাড়ি প্রায় ৮০০ গজ দূরে। ১৮ লাখ টাকা খরচ করে পাকা ঘর বানিয়েছিলাম। এখনো ঘরের কাজ শেষ হয়নি। বন্যায় ঘরটি ভেঙে গেছে।’
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব উল আহসান বলেন, বন্যায় দুর্গাপুরের গাঁওকান্দিয়া এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি ও গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।