নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে চিঠি

নেতারা বলেন, দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সদস্যসচিব ও তাঁর লোকজন দলের নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ করছেন।

  • সদস্যসচিবের হস্তক্ষেপে কমিটিতে মোটরশ্রমিক, মাদক সেবনকারীও স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

  • সদস্যসচিবের সঙ্গে তাঁতী লীগের দুই নেতা সখ্য আছে।

বিএনপি

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বদলে শ্রমিক, মাদক সেবনকারী ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। তাঁরা বলেন, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কমিটিতে ভিড়িয়েছেন। তাঁরা সদস্যসচিবকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ৬ জুন কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করেছেন।

ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন কমিটির আহ্বায়ক ইরশাদ আলী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নজরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ওয়ালিউল হক, আসলাম সরকার, বজলুল হক ও জয়নাল আবেদীন।

আবেদনে বলা হয়, গত ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর কমিটির সদস্যসচিব মামুন-অর-রশীদ দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের লোকজনদের কমিটিতে স্থান করে দেন। তাঁদের মধ্যে মোটরশ্রমিক, দিনমজুর, বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবনকারীও আছেন। এর পর থেকে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মামুনের লোকজন দলের নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ করছেন। এমনকি মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

সদস্যসচিব দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা এলে তিনি ১৯৯৪ সালে দলে যোগ দেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে বাদ দিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ২ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জেলার বানেশ্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সমাবেশ চলাকালে মামুনের লোকজন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাঁরা একপর্যায়ে মঞ্চে স্যান্ডেল ছুড়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের অপমান করেন।

গত ৫ মে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ওই অনুষ্ঠানে মামুন-অর-রশীদ ৩০-৩৫ জন লোক সঙ্গে নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের দুই নেতা ছিলেন। এর ২০-৩০ মিনিট পর তাঁরা আবারও নেতা-কর্মীদের মারধর করতে থাকেন। একই দিনে সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় মামুনের সঙ্গে থাকা তাঁতী লীগের ওই দুই নেতা নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল নেতা রিয়াজকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করেন। এ সময় আরও একজন আহত হন।

সর্বশেষ গত ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হয়। কর্মসূচি চলাকালে মামুন তাঁর লোকজন নিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার ওপর চড়াও হয় এবং উপস্থিত বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, মামুন ছাত্রাবস্থায় জাসদ ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা এলে তিনি ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। মামুনের এ কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে বাদ দিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে মামুন-অর-রশীদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না।