নির্ধারিত সময়ে সড়কের কাজ শেষ হয়নি, দুর্ভোগে লাখ মানুষ
আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা সড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুন মাসের শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। একইভাবে আজমিরীগঞ্জ-বদলপুর-পাহাড়পুর সড়কের ২০১৮ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ দুই ভাগের কাজ গত বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সড়কের কাজও শেষ হয়নি। কাজ শেষ না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে যায়।
খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান ঠিকাদার। তাই রাস্তার কাজ দ্রুততম সময়েই শেষ হবে বলে স্থানীয় লোকজন শুরুতে ধারণা করেছিলেন। অথচ ঘটল ঠিক এর উল্টো। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া তো দূরের কথা, বরং ধীরগতিতে এ কাজ চলায় জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কাজ অসমাপ্ত থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই দুটি রাস্তা এখন পানিকাদায় একাকার হয়ে পড়ে।
এ অবস্থা হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম দুটি রাস্তার কয়েক কিলোমিটার অংশের। রাস্তা দুটি হচ্ছে আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা ও আজমিরীগঞ্জ-বদলপুর-পাহাড়পুর। এ দুটি রাস্তার শিবপাশা থেকে পশ্চিম ভাগ এবং বদলপুর বাজার থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত অংশের ঠিকাদার হিসেবে রয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মর্তুজা হাসান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদকও।
রাস্তা দুটি নির্মিত হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতায়। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, মান বজায় রেখে চুক্তি অনুযায়ী দুটি সড়কের নির্মাণকাজ না চলায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিক চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সেসব চিঠিতে নিম্নমানের কাজ ও ধীরগতির অভিযোগও আনা হয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ঠিকাদার রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, জেলা শহর হবিগঞ্জে যেতে হলে আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এর বাইরে উপজেলার বদলপুর-পাহাড়পুর রাস্তাটিও উপজেলার অসংখ্য গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ দুই রাস্তার কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে। তাঁদের ভাষ্য, উন্নয়ন-যন্ত্রণায় ভুগছেন তাঁরা।
জেলা শহর হবিগঞ্জে যেতে হলে আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এর বাইরে উপজেলার বদলপুর-পাহাড়পুর রাস্তাটিও উপজেলার অসংখ্য গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ দুই রাস্তার কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বেহাল দুটি রাস্তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও চালকেরা ক্ষুব্ধ। গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা রাস্তার পশ্চিম ভাগ থেকে শিবপাশা পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত পানিকাদায় একাকার হয়ে আছে। এতে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। কোথাও কোথাও টমটম (ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেলের চাকা দেবে যাচ্ছে। অন্যদিকে বদলপুর-পাহাড়পুর রাস্তার বদলপুর থেকে কাটাখালী ও মাটিয়াকাড়া থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। এ রাস্তায় কেবল কাটাখালী থেকে মাটিয়াকাড়া পর্যন্ত কিছু অংশ আরসিসি করা হয়েছে।
শিবপাশা এলাকার দুজন বাসিন্দা জানান, রাস্তার কিছু অংশে প্রায় ছয় মাস আগে ইটের খোয়া ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর কাজ হয়নি। এতে বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা কাদায় মাখামাখি হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ে। বদলপুর এলাকার ব্যবসায়ী নৃপেশ চৌধুরী (৩৫) জানান, তাঁদের রাস্তায় কাজ অনেক আগে শুরু হলেও সম্পন্ন হয়নি। তাই এখনো এটি মাটির কাঁচা রাস্তাই রয়ে গেছে। গত কয়েক দিন আগে বন্যায় কাঁচা রাস্তার অধিকাংশ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগ এখন আরও বেড়েছে।
বদলপুর উত্তর হাটি গ্রামের রতীন্দ্র দাস (৩৫) জানান, ২০১৮ সালে রাস্তার উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর বদলপুর রাস্তার সম্মুখ অংশে বেশ কিছু ইটের খোয়াও এনে কাজের জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু রাস্তার মধ্যবর্তী সামান্য অংশ নির্মাণ করে বাকিটা সম্পন্ন করা হয়নি। দিনের পর দিন এভাবে রাস্তাটি পড়ে থাকায় স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে।
আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বেহাল প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শিবপাশা থেকে পশ্চিম ভাগ অংশের দরপত্র আহ্বান করলে সে কাজ পান মো. মর্তুজা হাসান। এ রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার ১৩৪ টাকা।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং ভায়া শিবপাশা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বেহাল প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শিবপাশা থেকে পশ্চিম ভাগ অংশের দরপত্র আহ্বান করলে সে কাজ পান মো. মর্তুজা হাসান। এ রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার ১৩৪ টাকা। গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এ রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। গত ৬ মাস আগে ৩ দশমিক ৫০ মিটার অংশে ইটের খোয়া ও পাথর ফেলা হলেও এখন পর্যন্ত পাকাকরণের কাজ শুরু হয়নি।
একই সূত্রে জানা গেছে, বদলপুর বাজার থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। এখানে দুটি ভাগে রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ দুই ভাগের কাজ গত বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজের অংশ হিসেবে ৭ কিলোমিটার ডুবন্ত রাস্তা ও ১১টি কালভার্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। এ কাজও পেয়েছে মতুর্জা হাসানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার অংশ পাকা করা হয়েছে। তবে রাস্তার পাশাপাশি সুরক্ষা দেয়াল নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পুরো রাস্তা পাকা না হওয়ায় এটি কাঁচা রাস্তা হিসেবেই রয়ে গেছে।
দলপুর বাজার থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। এখানে দুটি ভাগে রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ দুই ভাগের কাজ গত বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল বাছিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ তানজীর উল্লাহ্ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে জানান, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও রাস্তা দুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।
রাস্তা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মর্তুজা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে রাস্তার নির্মাণ সঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি। এখন আবার এলসি পাথরের সংকটের কারণে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। আর রাস্তার নির্মাণে যে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠছে, এটি ছড়াচ্ছে রাজনৈতিকভাবে আমার বিরোধী একটি পক্ষ। যতটুকু কাজ হয়েছে, মান বজায় রেখেই হয়েছে।’