নিখোঁজের ১১ মাস পরে কিশোরীর লাশ মিলল প্রেমিকের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে
মাদারীপুরের কালকিনিতে ১১ মাস ধরে নিখোঁজ থাকা দশম শ্রেণির ছাত্রী মুর্শিদা আক্তারের (১৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় করা মামলার আসামি শাহাবুদ্দিন আকনের (২৫) স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল শনিবার রাতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) লাশটি উদ্ধার করে। উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব বোতলা এলাকায় শাহাবুদ্দিনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মুর্শিদার গলিত লাশ মেলে।
পুলিশ ও মামলার এজাহারের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব বোতলা গ্রামের মজিদ আকনের ছেলে শাহাবুদ্দিন আকনের সঙ্গে একই গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের মেয়ে মুর্শিদা আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথাও পাকাপোক্ত হয়। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটার দিকে মুর্শিদা চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু সে আর বাড়ি ফেরেনি। পরের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ডাসার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মুর্শিদার পরিবার। দীর্ঘদিন মুর্শিদার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় গত বছরের ৪ মার্চ মুর্শিদার মা মাহিনুর বেগম বাদী হয়ে শাহাবুদ্দিন আকনকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।
দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১৮ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর এই মামলার প্রধান আসামি শাহাবুদ্দিন আকন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। রিমান্ডে শাহাবুদ্দিন তাঁর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে মুর্শিদার লাশ লুকিয়ে রাখা আছে বলে স্বীকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে মুর্শিদার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজ মুর্শিদার লাশ উদ্ধার হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শাহাবুদ্দিনের বাড়ির চারপাশে ভিড় করেন কয়েক শ মানুষ। এ সময় এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
মুর্শিদার বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ঘরে শয্যাশায়ী। মা মাহিনুর বেগম ঘরের উঠানে আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার মাইয়াডারে শাহাবুদ্দিন ডাইকা লইয়া গেছে। ডাক্তার দেখাইয়া ওষুধ আইনা আবার বাড়িতে ফেরার কথা কইয়া গেছে। ও আর ফিরা আহে নাই রে। আমার মাইয়াডারে যারা মাইরা হালাইছে, তাগের আমি ফাঁসি চাই রে।’
মুর্শিদার ছোট খালু রিপন শেখ বলেন, মুর্শিদা ও শাহাবুদ্দিনের সম্পর্কের কথা সবাই জানতেন। তাদের বিয়ের কথাও পাকা হয়েছিল। তাঁর ধারণা, শাহাবুদ্দিনদের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও মুর্শিদাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় পারিবারিক চাপের কারণে শাহাবুদ্দিন মুর্শিদাকে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম বলেন, লাশটি দীর্ঘ ১১ মাস সেপটিক ট্যাংকের নিচে থেকে পচে–গলে গেছে। কঙ্কাল, পরনে থাকা পোশাক, ভ্যানিটি ব্যাগসহ বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে মুর্শিদার লাশ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল ওহাব বলেন, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির পরিবার থানায় মামলা করার পর থেকে শাহাবুদ্দিন পলাতক ছিলেন। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।