নার্সের ভুলে কোভিশিল্ডের পর পেলেন মডার্নার টিকা, চিন্তিত নারী
সিলেট নগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সন্ধ্যা রানী দাস (৬০)। গত ২৬ এপ্রিল তিনি এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এ সময় তাঁকে ‘কোভিশিল্ড’ দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই সন্ধ্যা রানী দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
১৪ আগস্ট সন্ধ্যা রানীর মুঠোফোনে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের তারিখ জানিয়ে খুদে বার্তা আসে। এতে বলা হয়, ১৭ আগস্ট তাঁকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। সে অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালে যান। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে তিনি টিকা নিতে যান। তখন টিকাদানকারী নার্স কাগজ না দেখেই সন্ধ্যা রানীকে মডার্নার টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেন।
টিকা দেওয়ার পর টিকাদান কার্ডে টিকার নাম লিখতে গেলেই বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে একই ধরনের টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও ওই নারীকে দুই ধরনের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই নারী ও তাঁর স্বজনেরা ঘটনার প্রতিবাদ জানালে নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওই নারীকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর সাড়ে তিন মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ধরনের টিকা দেওয়ায় ওই নারীর কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা হবে না। তবে এক মাস পর ওই নারীকে পুনরায় মডার্নার টিকা দেওয়া হবে।
অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে তিনি টিকা নিতে যান। তখন টিকাদানকারী নার্স কাগজ না দেখেই সন্ধ্যা রানীকে মডার্নার টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেন।
টিকাকেন্দ্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রথম ডোজ হিসেবে যাঁরা আগে কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে। এটি বেশ কয়েক দিন ধরেই ঘটা করে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি যাঁরা খুদে বার্তা পেয়ে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে এসেছেন, তাঁদেরও নগর ভবন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে এখন শুধুমাত্র মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। যে সময়ে ওই নারী টিকা নিয়েছেন, তখন প্রচুর টিকাগ্রহীতার ভিড় থাকায় টিকাদান কার্ডটিও সংশ্লিষ্ট নার্সের পক্ষে দেখা সম্ভব হয়নি। ফলে ভুলটি হয়েছে।
সন্ধ্যা রানীর জামাতা হিমেল সরকার অভিযোগ করেন, তাঁর শাশুড়ির মুঠোফোনে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী তিনি সেখানে যান। কেউ তাঁকে নগর ভবনে গিয়ে টিকা দিতে হবে, এমনটা জানাননি। এরপর যখন নার্সের ভুলে মিশ্র টিকা দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বিষয়টি তাঁরা নগরে টিকাদান কার্যক্রমের সমন্বয়ক ও সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে অবহিত করেছেন। মিশ্র টিকা দেওয়ার পর আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত তাঁর শাশুড়ির কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, এ নিয়ে তাঁর শাশুড়ি ও তাঁরা চিন্তায় আছেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উভয় পক্ষের ভুলেই দুই ধরনের টিকা দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। বারবার ওসমানী কেন্দ্রে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল, যাঁরা কোভিশিল্ডের টিকা নেবেন, তাঁরা যেন নগর ভবন কেন্দ্রে যান। মূলত মিশ্র টিকার ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্যই কোভিশিল্ডের টিকা যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নেবেন, তাঁদের জন্য নগর ভবন কেন্দ্র পৃথক করা ছিল। আর যাঁরা মডার্নার টিকা নেবেন, তাঁদের ওসমানী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছিল। এত সতর্কতার পরও একটি ভুল হয়ে গেল।
মো. জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ওই নারী যখন টিকা নিতে যান, ‘তখন প্রচুর টিকাগ্রহীতার ভিড়ের কারণে সংশ্লিষ্ট বুথের নার্স টিকা দেওয়ার আগে টিকা কার্ডটি দেখতে পারেননি। টিকা কার্ডটি দেখে নিলে এ ভুল হতো না। ওই ভুক্তভোগী নারীর স্বজনেরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। যেহেতু সাড়ে তিন মাসেরও বেশি আগে ওই নারী কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছেন, তাই সমস্যা হবে না। এক মাস পর ওই নারীকে আবার মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। তবেই তাঁর শরীরে মডার্নার টিকার কার্যকারিতা তৈরি হবে। আর ভবিষ্যতে যেন কেউ টিকা কার্ডের প্রথম ডোজের বিষয়টি না দেখে কোনোভাবেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা না দেন, সেটি সবাইকে কড়াকড়িভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’