নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কর্মসূচি অব্যাহত
দেশব্যাপী ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি আজ শনিবারও অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচি থেকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ সকাল ১০টার দিকে নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বরিশাল নগরের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে মানববন্ধন করে উদীচী। বেলা ১১টায় একই স্থানে আরেকটি মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় যুব সংহতি বরিশাল জেলা ও নগর কমিটি। এ সময় সেখানে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটিও পৃথক আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
বরিশালের এসব কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদা, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, শিশু সংগঠক জীবন কৃষ্ণ দে, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন, বাসদের বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী, উদীচী সভাপতি সাইফুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মশাল মিছিল করেন তাঁরা। মশাল মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘরে-বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ধর্ষণের বিরুদ্ধে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন।
এসব দাবির মধ্যে রয়েছে: ধর্ষণের ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে; ধর্ষণে সরাসরি জড়িত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে; ধর্ষণে সহায়তাকারী, তদন্তে অনিয়মকারী, সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপাকারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে হবে এবং ধর্ষণের শিকার নারীকে সমাজে হেয়প্রতিপন্নকারীকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ ছাড়া ‘সচেতন, সংগঠিত সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ’ স্লোগান ধারণ করে দেশব্যাপী ঘটে চলা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বরিশালের গৌরনদীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গৌরনদী উপজেলা ও পৌর কমিটি, গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাব, এইড অর্গানাইজেশন (এও), সিসিডিবি ও জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আজ সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন গৌরনদী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম। সমাবেশে বক্তব্য দেন এইড অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের গৌরনদী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রেমানন্দ ঘরামী, গৌরনদী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহসভাপতি মো. জামাল উদ্দিন, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের গৌরনদী পৌর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা চক্রবর্তী নিতাই লাল, সিসিডিবির কর্মসূচি কর্মকর্তা সরকার ফিলিপ, নারীনেত্রী মাধবী রানী দাস, গৌরনদী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সুজনের পৌর সভাপতি পলাশ তালুকদার, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, নারীবিষয়ক সম্পাদক সুবর্ণা প্রমুখ।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালীতেও ধর্ষণ ও নারীর প্রতি নিপীড়ন-নির্যাতন-সহিংসতার প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পটুয়াখালী জেলা শাখার উদ্যোগে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচিতে জোটের নেতারা ছাড়াও শিশু, নারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা অংশ নেন। এ সময় সেখানে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক শ ম দেলোয়ার হোসেন, সিপিবির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সমীর কর্মকার, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর সংগঠনের জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আজ সকাল ১০টার দিকে বগুড়া শেরপুরেও নারী নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) আয়োজনে শেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে প্রেসক্লাবের সামনে শহরের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোক সমবেত হতে থাকেন। এক ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের উপজেলা কমিটির সভাপতি শেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. জানে আলম, সাপ্তাহিক আজকের শেরপুর পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি সাইফুল বারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার, শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম কুণ্ডু, সুজনের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব আলী প্রমুখ। বক্তারা সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানান তাঁরা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলাতেও ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং জড়িত ব্যক্তি ও তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মতলব উত্তর থানার সামনের সড়কে ওই মানববন্ধন হয়। জাতীয় মানবাধিকার সমিতির উপজেলা শাখা, ‘আলোকিত মতলব’ ও ‘হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ’ নামের স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ওই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বক্তৃতা করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা আক্তার, আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজী ও সেলিম মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শহিদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।
বক্তারা সিলেট, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান এবং এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাঁদের প্রশ্রয়দাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। আয়োজকেরা জানান, কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার পাঁচ শতাধিক লোক অংশ নেন।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল এবং প্রতিনিধি, পটুয়াখালী; গৌরনদী, বরিশাল; মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর ও শেরপুর, বগুড়া]