নারায়ণগঞ্জ শহর ফাঁকা, বাজারগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
সরকারের ঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’–এর আজ তৃতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জ শহর ফাঁকা। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। নেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্বিকার নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ৩ নম্বর মাছ ঘাট পাইকারি বাজার, চারার গোপ পাইকারি ফলের আড়ত ও দিগুবাবুর বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে। তবে একেবারেই জনশূন্য ছিল নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের অধিকাংশ এলাকা। সকাল ছয়টায় শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভিড় ছিল। অধিকাংশ যাত্রী শহরের বাজারগুলোতে কেনাকাটা করতে যাওয়া ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ী। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি নৌকায় ১০ জন করে যাত্রী ওঠানোর কথা থাকলেও বেশ কিছু নৌকায় গাদাগাদি করে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী পারাপার করা হয়।
সকাল ৭টায় শহরের ৩ নম্বর পাইকারি মাছ ঘাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। বাজারে আসা অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের প্রায় সবাই ছিলেন মাস্কহীন। ভিড়ের মধ্যেও মাছ নিলামের স্থানগুলোতে আলাদা করে মানুষের জটলা চোখে পড়েছে। মাছ কাটার জায়গাগুলোতে মাস্ক ছাড়াই লোকজন মুখোমুখি বসে মাছ কাটার কাজ করেছেন। কেবল কেনাবেচা নয়, বাজার এলাকার অন্তত আটটি দোকানের ভেতরে বসে ক্রেতা–বিক্রেতারা সকালের নাশতা করছিলেন। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাজার এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি নৌকায় ১০ জন করে যাত্রী ওঠানোর কথা থাকলেও বেশ কিছু নৌকায় গাদাগাদি করে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী পারাপার করা হয়।
আলিফ মির্জা ফিশ নামের একটি আড়তের স্বত্বাধিকারী বাবু মির্জা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারটিতে ৪০ জন আড়তদার ও প্রায় দেড় শ বিক্রেতা ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাছ কেনাবেচা করেন। এই বাজারে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের আনাগোনা হয়।
মাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাজার পর্যন্ত এসেছিলেন। তবে বাজারে আসা ক্রেতা–বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক না থাকা এবং ধাক্কাধাক্কি করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। এতে নিজের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
সকাল ৮টায় মাছ ঘাটের মতো নগরের চারারগোপ পাইকারি ফলের আড়তের বাইরে ও ভেতরে ক্রেতা–বিক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। আড়তের অধিকাংশ ক্রেতা–বিক্রেতাই মাস্ক ছাড়া বেচাকেনা করছিলেন। বেল, আনারস, কলা, ডাব, বাঙ্গি ও তরমুজের আড়তগুলোতে ছিল অতিরিক্ত ভিড়।
এদিকে অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নগরের দিগুবাবুর পাইকারি বাজারে ক্রেতাদের ভিড় কম চোখে পড়ে। বাজারে আসা ক্রেতা–বিক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। বাজারে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বিনয় রায় বলেন, অধিকাংশ ক্রেতা–বিক্রেতাই মাস্ক পরছেন না। লোকজন যেখানে সেখানে কফ–থুতু ফেলছেন। ধাক্কাধাক্কি করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। লকডাউনের ফল পেতে হলে শহরের মতো বাজারগুলো নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। এ জন্য গত বছরের মতো বাজারগুলোর আয়তন বাড়িয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে দোকান বসানোর পরামর্শ দেন তিনি।
আগের বছরের মতো বাজারের আয়তন বাড়িয়ে দোকানগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে বাজার কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেটা হয়নি।
বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় থাকলেও শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শহর প্রায় ফাঁকা ছিল। বরাবরের মতোই মুদি, ওষুধ ও জরুরি পণ্য ছাড়া সব ধরনের বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। শহরে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা ও লকডাউন কার্যকর করতে নগরের চাষাঢ়া ও খানপুর মোড়ে পুলিশের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগের বছরের মতো বাজারের আয়তন বাড়িয়ে দোকানগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে বাজার কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেটা হয়নি। শিগগিরই বাজার কমিটির সঙ্গে বসে বাজারগুলোতে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হবে।
লকডাউন বাস্তবায়নে ৩০টি চেকপোস্ট ও বেশ কিছু মোবাইল টিম কাজ করছে জানিয়ে এসপি বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলকারখানা খোলা। সেসব কারখানার শ্রমিকদের চলাচলের জন্য ছোট ছোট যানবাহন ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ আছে।