নান্দাইলে জোরপূর্বক দিনমজুর পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় দিনমজুর পরিবারের দখল করা জমিতে মুঠােফােন কােম্পানির টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় তিনটি পরিবারের ৩৩৩ শতক জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখল করা জমির কিছু অংশ একটি মোবাইলফোন কোম্পানির কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেই জমিতে তিন দিন ধরে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।

দিনমজুর পরিবারগুলার এক সদস্য মো. আবু তালেব (৩৫) এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নান্দাইল মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন। বেদখল হওয়া জমির মালিকেরা উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ৩৩৩ শতক জমির মালিক ছিলেন তাঁর দাদি মোছা. তারা বানু। একই জমি দাবি করতেন ইমাম হোসেন নামে প্রতিবেশী এক ব্যক্তি। এ নিয়ে ২০০৩ সালে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে একটি বাঁটোয়ারা মামলা হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালে আদালত তারা বানুর পক্ষে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ইমাম হোসেন জেলা যুগ্ম জজ আদালতে আপিল করলে সেটিও ২০১৪ সালে খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালে আদালত একটি কমিশন গঠন করে বাদী তারা বানুর পরিবারকে ওই জমির দখল বুঝিয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার কালিয়াপাড়া গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা বানুর মৃত্যুর পর ওই জমির ওয়ারিশ হন তাঁর তিন ছেলে ইসমাইল হোসেন, ইসরাফিল হোসেন ও আবুল কাশেম। তাঁরা তিনজনই মারা গেছেন। জীবিকার জন্য ইসরাফিল ও কাশেমের সন্তানেরা ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে থাকেন ইসমাইল হোসেনের দুই ছেলে। তাঁরা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ইসমাইল হোসেনের ছেলে আবু তালেব (৩৫) প্রথম আলোকে বলেন, জমি বেদখল হওয়ার পর জীবিকার তাগিদে তাঁকে ও তাঁর ভাইকে দিনমজুরির পাশাপাশি রিকশা চালাতে হয়। তাঁর বাবা এসব জমির আইনি দিকগুলো দেখাশোনা করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁদের ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে আসে। আদালত জমির দখল বুঝিয়ে দিলেও বিবাদী ইমাম হোসেনের (বর্তমানে মৃত) ছেলেরা তা জোরপূর্বক দখল করে নেন। জমি দখলের সময় তাঁদের মারধর করে আহত করা হয়। ওই সময় তাঁরা কারও সহায়তা চেয়েও পাননি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দখল করা জমিতে একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সেটির পাহারা দিচ্ছেন কিছু লোক। মোবাইল কোম্পানিকে জমিটি ভাড়া দিয়েছেন ইমাম হোসেনের ছেলেরা। ঢাকার জে আর কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. সুজন মিয়া নির্মাণকাজ দেখাশোনা করছেন। সুজন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জমি নিয়ে আইনি কোনো ঝামেলা আছে কি না, সেটা তাঁর জানার কথা নয়। তিনি শুধু নির্মাণকাজ দেখাশোনা করছেন।

ইমাম হোসেনের ছেলে মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর বিবাদী হিসেবে তিনি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। তাঁর দাবি, উচ্চ আদালত তাঁর আপিল মঞ্জুর করেছেন। তবে ইদ্রিস মিয়া এ–সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে রাজি হননি।

আদালতে আপিল মঞ্জুর হলেই জমি দখল করে ভাড়া দেওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে ইদ্রিস মিয়া কোনো উত্তর দেননি। তিনি (ইদ্রিস) নিরুত্তর থাকলেও তাঁর বড় ভাই মো. রুকন উদ্দিন দবি করেন, ওই জমি তাঁদের ক্রয় করা। ক্রয় করা জমি মোবাইল কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ক্রয় করা জমি হলে কী নিয়ে আদালতে আপিল করেছিলেন জানতে চাইলে তিনিও চুপ হয়ে যান। পরে ইদ্রিস মিয়া এ প্রতিবেদককে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, আবু তালেব নামের এক ব্যক্তি থানায় একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। দরখাস্তের বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখার জন্য থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে। উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছে।

উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. তাছলিমা আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জমির প্রকৃত মালিক হচ্ছে দিনমজুর পরিবারগুলো। তাঁদের পক্ষে আদালতের চূড়ান্ত রায় আছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ রায় উপেক্ষা করে গায়ের জোরে দিনমজুর পরিবারগুলোর জমি দখল করে নিয়েছে।