নাটোরে ট্রাক দাঁড়াতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ

নাটোরের হরিশপুর বাইপাস বাস স্টপেজে ট্রাকে করে যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকায়। আজ শনিবার দুপুরে
ছবি: মুক্তার হোসেন

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। নাটোরের হরিশপুর বাইপাস বাস স্টপেজ লোকে লোকারণ্য। ‘ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা; মাত্র ৫০০ টাকায় চৌরাস্তা’ বলে হাঁকডাক চলছে। তবে সেখানে বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক। মুহূর্তের মধ্যে ভর্তি হয়ে গেল ট্রাকটি। ১৩৬ বর্গফুটের ট্রাকটিতে তখন ৮৩ জন যাত্রী। ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজে চালকের সহকারী মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করলেন। এরপর ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে দিলেন ট্রাকটি।

শনিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন দৃশ্য ছিল হরিশপুর বাইপাস সড়কে। সেখানে একটি পর একটি ট্রাক এসে দাঁড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই ট্রাকে ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সারা দিন সেখান থেকে কতটি ট্রাক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে, তার সঠিক হিসাব কারও কাছে পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে। হরিশপুর বাইপাসের মতো একই অবস্থা বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাসের।

সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর শনিবার সকাল থেকে কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ছুটতে শুরু করেন। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে দূরপাল্লার গণপরিবহন পাননি। নাটোরের আবহাওয়া ছিল বৈরী, সারা দিন রোদ-বৃষ্টির খেলা চলেছে। এর মধ্যেই নিরুপায় হয়ে মানুষ পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস ও তিন চাকার ছোট ছোট যানবাহনে ঢাকার পথে ছুটেছেন। এসব যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হয়।

পথে বের হওয়া মানুষদের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে পরিবহনশ্রমিকেরা পকেট খালি করছে। দূরত্বভেদে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনেকে বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে বের হয়েছেন, তাতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে খাওয়ার খরচ দিয়ে ভাড়া মেটাচ্ছেন। কেউবা স্বজনদের কাছ থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করছেন।

নাটোর সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের মরিয়ম বেগম (২৮) জানান, তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। রোববার সকালে সেখানে যোগদান করতে না পারলে চাকরি চলে যাবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ট্রাকে উঠেছেন। ৫০০ টাকার বিনিময়ে তাঁকে ট্রাকের দেড় ফুট জায়গা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাগসহ তাঁকে দাঁড়াতে হচ্ছে।

ট্রাকের ক্যাবিনে বসা নজরুল ইসলাম জানান, রোদ-বৃষ্টির ভয়ে তিনি এক হাজার টাকার বিনিময়ে ভেতরে বসার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে চারজনের আসনে তাঁরা সাতজন বসেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

ফরিদা পারভিন (৩২) তাঁর দুই শিশুসন্তান নিয়ে উঠেছেন মিঠু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ট্রাকে। সঙ্গে রয়েছে চালের একটি বস্তা। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্যও সমান ভাড়া নিছে। এটা তিনি আগে ভাবেননি। নিরুপায় হয়ে দুপুরের খাবারের টাকা দিয়ে ভাড়া মিটিয়েছেন। বাসস্ট্যান্ডে কিছু লোক বিনা মূল্যে দুই প্যাকেট খাবার দিয়েছেন। তাতে দুপুরের আহার হয়েছে।

ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার জন্য নাটোরের হরিশপুর বাইপাসে মানুষের ভিড়। আজ শনিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সেখানে শরিফুল ইসলাম নামের একজনকে ট্রাকে ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, কর্মজীবীদের অনুরোধেই তাঁরা ট্রাকে মানুষ বহন করছেন। ফেরার সময় ট্রাকটি ফাঁকা আসবে। তাই ভাড়া ৫০০ টাকার কমে নেওয়া যাচ্ছে না। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে ট্রাকের পাটাতনে ত্রিপল বিছিয়ে দেওয়া আছে।

নাটোর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার বলেন, পণ্যবাহী যানবাহনে মানুষ পরিবহন বেআইনি। তবে যাত্রীদের কর্মস্থলে পৌঁছার বিকল্প যানবাহন না থাকায় তাঁদের ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি যেন নিতে না পারে, সে ব্যাপারে নজরদারি রয়েছে।