কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার লাগানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত ও এক পা হারিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান আসিক আহম্মেদ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁর কাজ ও সহায়তার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাগেশ্বরী-কুড়িগ্রাম সড়কের চণ্ডীপুরে এ মানববন্ধন করেন স্থানীয় লোকজন। এখানে বক্তব্য দেন মহিবুল হক, আসিকের বাবা রফিকুল ইসলাম, শাহানুর হক, আক্কাস আলী ও ফজলুর রহমান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বামনপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আসিক আহম্মেদ। তিনি দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাগেশ্বরী জোনাল অফিসে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। গত বছরের ২৬ নভেম্বর লাইন টেকনিশিয়ান তোজাম্মেল হক তাঁকে ডেকে নেওয়াশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সেচে নতুন সংযোগ, মিটার ও ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্য পাঠান। তিনি ওই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ট্রান্সফরমার লাগানোর কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে ওই লাইনে সংযোগ দেওয়া হলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তারের ওপর ঝুলে পড়েন আসিক।
প্রথমে তাঁকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁর দুই হাত ও এক পা কেটে ফেলা হয়। চিকিৎসা শেষে আসিক বাড়ি ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ অবস্থায় হুইলচেয়ারে চলাফেরা করছেন। কিন্তু কাজ না থাকায় বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বক্তারা বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং বাড়ি ফেরার পর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেও এখন তারা খোঁজ নিচ্ছে না। এরই প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করছি।’
এলাকাবাসী জানান, নয় মাস আগেও আসিক আহম্মেদের শরীর ছিল স্বাভাবিক। সুস্থ শরীরে কাজ দিব্যি কাজ করতেন। দুঃসময়ে অফিসের ভরসা ছিলেন তিনি। হাত-পা হারানোর পর খোঁজই নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাঁরা আরও জানান, কৃত্রিম হাত-পা লাগাতে প্রয়োজন ছয় লাখ টাকা, যা পরিবারের সাধ্যের বাইরে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান আসিক ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর সংসারের হাল ধরতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে দৈনিক মজুরিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ২৬ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় এখন পরিবারের বেহাল দিন কাটছে।
আসিক বলেন, ‘আমি এখন পঙ্গু। আমার সঙ্গে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিলেও বর্তমানে আর দায় নিচ্ছে না। এখন কৃত্রিম হাত-পা লাগাতে গেলে প্রয়োজন ছয় লাখ টাকা।’
আসিক এ অফিসে নিয়মিত কাজ করতেন—এটা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ঘটনার দিন কাজের সময় অফিসের কেউ তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। আমিও চাই অনেকে এগিয়ে আসুক তাঁকে সাহায্য করতে। আমাদের অফিশিয়ালি করার কিছুই নেই।আতিকুর রহমান, ডিজিএম, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
আসিকের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ডিজিএমের কাছে গেলে তিনি তাড়িয়ে দেন। কোথায় যাব?’
নেওয়াশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাঁরা কাজে এসেছেন, সেদিন আমি জানতাম না। ঘটনা শোনার পর আমি এসে আসিককে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নাগেশ্বরী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আতিকুর রহমান বলেন, ‘আসিক এ অফিসে নিয়মিত কাজ করতেন—এটা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ঘটনার দিন কাজের সময় অফিসের কেউ তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। আমিও চাই অনেকে এগিয়ে আসুক তাঁকে সাহায্য করতে। আমাদের অফিশিয়ালি করার কিছুই নেই।’