নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীদের হাতে জাবি শিক্ষক হেনস্তা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে হেনস্থার প্রতিবাদে নিজেদের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধর ও হেনস্তার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা একটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন এই মানববন্ধন হয়।

এতে অংশগ্রহণ করেন পরিসংখ্যান বিভাগের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, একটি ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে তাঁদের শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমানকে গত রোববার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কফিশপে ডেকে নিয়ে মারধর করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। তাতে দেখা যায়, ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর ও হুমকি দিচ্ছেন কয়েকজন তরুণ। মারধরের শিকার আতিকুর রহমান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়ে আতিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী আতিকুর রহমানকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যারাবিকা নামের একটি কফি হাউসে ডাকেন। পরে সেখানে ওই ছাত্রীর বন্ধুরা দলবেঁধে তাঁকে মারধর করেন।

মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মারধর করা হয়েছে। ফেসবুকে ওই শিক্ষকের ছবিসহ পোস্ট করে তাঁকে অপমানিত করা হয়েছে। এভাবে নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান করেছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা ছিল এবং স্পষ্ট যে এটি একটি সাজানো নাটক।

বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসলিমা আকতার বলেন, পুরো ঘটনা সবার সামনে নিয়ে আসা হোক। আর এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কোনো তথ্য ছাড়াই তাঁরা ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে একটা নাটক সাজিয়ে পোস্ট দিল। শিক্ষক দোষী হলেও তাঁর গায়ে হাত তোলার অধিকার কোনো শিক্ষার্থীর নেই। যে শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগে হেনস্তা করা হলো, তিনি এর আগে সুনামের সঙ্গে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

ফেসবুকে ওই শিক্ষককে মারধরের ভিডিওটি ছড়ানো ব্যক্তিদের একজন অরিন্দম বর্ধন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। এই প্রতিবেদককে অরিন্দম বলেন, একজন ছাত্রী গণিত বুঝতে আতিকুর রহমানের কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি জাহাঙ্গীরনগরে গিয়ে শিখে আসতে বলেন। এরপর থেকে তিনি ওই ছাত্রীকে দেখা করার প্রস্তাব এবং আইফোনসহ বিভিন্ন দামি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে আতিকুরকে ডেকে নিয়ে ধাওয়া দেন।

আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই ছাত্রী আমাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন দিয়ে বিরক্ত করত। তাঁর একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে। কয়েকবার সমাধানও করে দিই। তিনি আবার আমাকে ফোন করে পড়ানোর কথা বললে আমি পরীক্ষার আগে নর্থ সাউথে যাব না বলে জানাই। তারপরও বারবার অনুরোধ করলে তাঁকে পড়াতে রাজি হই এবং নর্থ সাউথে আমার অফিস কক্ষে আসতে বলি। কিন্তু তিনি অফিসে না গিয়ে আমাকে কফি হাউসে ডাকেন। সেখানে ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেধড়ক মারধর করেন। তাঁরা আমার মানিব্যাগ বের করে সব টাকা নিয়ে যান।’

এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যোগযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। সহকারী রেজিস্ট্রার সোনিয়া বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

শিক্ষককে পিটিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ–উল–হাসান। তিনি বলেন, আতিকুর রহমান যদি দোষ করেও থাকেন অভিযোগকারী তা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে পারতেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এখন অভিযোগকারী ডেকে নিয়ে যেভাবে আতিকুরকে হেনস্তা ও মারধর করেছেন, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।