নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় এক যুবক আটক
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তা করার ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন-সংলগ্ন এলাকা থেকে যুবককে আটক করা হয়। এর আগে ওই তরুণীকে হেনস্তা করার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি আলোচনায় আসে।
গত বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে বেড়াতে আসা ওই তরুণী ও দুই তরুণের সঙ্গে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এই ঘটনা ঘটে।
আটক ওই যুবকের নাম মো. ইসমাইল ইসলাম (৩৫)। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা এলাকার মৃত বাদল মিয়ার ছেলে। সিসিটিভির ফুটেজ এবং মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর সূত্র ধরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ তাঁকে আটক করেছে। তবে ঘটনার সময় ইসমাইল ইসলামের ভূমিকা কি ছিল, সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানায়নি।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন ওই তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত অন্য কয়েকজন ব্যক্তি।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও তাঁর পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী।
এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তাঁরাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী জানান, ওই দিন পরনের পোশাক নিয়ে স্টেশনে যাত্রীদের মাধ্যমে ওই তরুণী হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে ওই দিন ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করতে রাজি হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। আটক যুবকের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, এই ঘটনায় একজনকে আটক করে ভৈরব রেলওয়ে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি আইনানুগ প্রক্রিয়া রেলওয়ে পুলিশ সম্পন্ন করবে।