‘নতুন দুইডা ঘর বানাইছিলাম, বন্যার পানি ভাসাইয়া নিল’
নেত্রকোনার খালিয়াজুরির সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যানিকেতনের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন রূপনগর গ্রামের নুরুল ইসলামের পরিবারের ছয়জন, সঙ্গে এনেছেন বাড়ির দুটি গরুও।
গতকাল সোমবার কথা হয় নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার থেকে তাঁরা পরিবারের সবাই এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। চার দিনের মধ্যে মাত্র দুই দিন ভাত খেয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান দুই প্যাকেট বিস্কুট ও ১০ কেজি চাল দিয়েছেন। কিন্তু চুলা না থাকায় ভাত রান্না করা যাচ্ছে না।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা রূপনগর গ্রামের সনু মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘আমার তিন ছেরা মাইনসের বাড়িঘরে কাজকাম কইরা টেহা জমাইয়া ও কিছু ঋণ কইরা এইবার নতুন দুইডা টিনের ঘর বানাইছিলাম, বন্যার পানি ঘর দুইডা ভাসাইয়া নিল। ঘরের ধান–চালসহ সবকিছুই নিয়া গেছে পানি। অহন এই ইস্কুলে সবাই আশ্রয় লইয়া আছি। এহানে শুকনা খাওন দেয়।’
গতকাল সিদ্দিকুর রহমান বালিকা বিদ্যানিকেতন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে হাঁটুপানি। তিনতলা ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে গাদাগাদি করে আছে।
তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেওয়া সিদ্দিকপুরের খায়রুল ইসলাম বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজন বারবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। শুকনা খাবার ও পানি দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর তিন বছরের শিশুসন্তান লিমনের কষ্ট হচ্ছে। সে মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পাচ্ছে না।
খালিয়াজুরির মুদিদোকানি নবী হোসেন বলেন, ‘বন্যায় আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীর ক্ষতি হইছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে পানি ঢুইক্কা খাদ্যসামগ্রীসহ মালামাল নষ্ট হইছে। পানির কারণে অহন দোকানপাট বন্ধ। নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাওনের পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বোতলের পানি কিন্না খাওনের টেহা নাই অনেকের। আর সব জায়গায় পাওয়াও যায় না। এখন হাহাকার চলছে।’
খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত আটটার পর থেকে পানি কিছুটা কমছে। উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা এখনো পানিতে ডুবে আছে।
এদিকে মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান এলাকার বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘গত শুক্কুরবার রাইত থাইক্কা হঠাৎ পানিতে ঘরবাড়ি ডুবাইছে। সবার ঘরে ঘরে অহন হাঁটুপানি। মাচার ওপরে উঠে ঘরবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটাইতাছি। সোমবার রাইত থাইক্কা পানি কমতাছে। আল্লাহর রহমতে বাইচ্চা যে আছি, এটাই বড় কথা।’
মদনের ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, পানি ধীরগতিতে কমছে। এখনো উপজেলার ৭৫ শতাংশ এলাকা ডুবে আছে। এর মধ্যে গোবিন্দ্রশ্রী, তিয়শ্রী, ফতেপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়ন প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা পানির নিচে। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় আট হাজার মানুষ আছে।