দখলদার ও শিল্পমালিকদের জবরদখলে ঐতিহ্য হারিয়েছে তুরাগ। ছোট খালের মতো হয়ে গেছে। ট্যানারির বর্জ্যে ধলেশ্বরী দূষিত হচ্ছে। খরস্রোতা যমুনার শাখা বংশী নদীর অনেক অংশ দখল হয়ে গেছে। দেখতে এখন নালার মতো। কর্ণপাড়া খাল, বিলবাগীল, তাঁতি বিল, রইত্যা বিল, কুলুবাড়ি খাল, তেঁতুলঝোড়া খাল, শুকনা বিল, পোড়াবাড়ি বিলসহ আশপাশের খাল-বিলের অবস্থাও নাজুক।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা, সংশ্লিষ্ট মহলের তদারকির অভাব ও সচেতনতার অভাবে ঢাকার সাভার এলাকার নদ–নদী ও বিভিন্ন জলাশয় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এতে বসবাসের অনুপযোগী জনপদে পরিণত হয়েছে সাভার।
অস্তিত্ব–সংকটে সাভারের নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন তথ্যের আলোকে এসব কথা করেন। বুধবার সাভার গলফ ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এ গণশুনানির আয়োজন করে।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে নদী-নালা, খাল-বিলের সীমানা চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করা ও দূষণ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাভারের নদী-খাল-জলাশয়ের অতীত ও বর্তমান অবস্থা এবং জনদুর্ভোগবিষয়ক উপস্থাপনায় নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ, সাভারের সদস্য অধ্যাপক মো. আবু সাইদ জানান, তুরাগ নদের তীরে অসংখ্য অননুমোদিত আবাসন প্রকল্প, কলকারখানা ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তীরে পোশাকশিল্পের কারখানা আছে ৬৮টি। প্রতিনিয়ত কোনো শোধন ছাড়াই বর্জ্য নিষ্কাশন করায় নদের পানি সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীর অকার্যকর সিইটিপি ও ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, হেভি মেটাল এবং ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো রূপ পরিকল্পনা না থাকায় সব বর্জ্য পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে, যা নদীটিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। বংশী নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বর্জ্য নদীকে দূষিত করছে। কর্ণপাড়া খাল, বিলবাগীল, তাঁতি বিল, রইত্যা বিল, কুলুবাড়ি খাল, তেঁতুলঝোড়া খাল, শুকনা বিল, পোড়াবাড়ি বিলসহ আশপাশের জলাশয়গুলো দখল–দূষণে এখন মৃতপ্রায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) পরিশোধিত ও অপরিশোধিত বর্জ্য ধলাইবিল, পাকুরিয়াবিল, নোয়াদ্দাখাল, রক্তারপুর খালসহ পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। এসব বিলের দূষিত পানি পড়ছে বংশী নদীতে।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি আবদুল গণি অভিযোগ করে বলেন, ট্যানারিশিল্পের কারণে পরিবেশ সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। ঢাকার চারপাশে বংশী, ধলেশ্বরী ও কর্ণপাড়া খালকে সংরক্ষণের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, সমাধানগুলো স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়—দুটি উপায়ে করতে হবে। খালগুলো দখলমুক্ত করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত নদীর মধ্যে অন্যতম তুরাগ ও ধলেশ্বরী। বুড়িগঙ্গার পর ধলেশ্বরী দূষণ হচ্ছে। এর দায় আমাদের নিতে হবে। কাগজে–কলমে আমরা দেখেছি, হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরে সিইটিপি ভালোভাবে কাজ করছে। কিন্তু এখানেও যে হাজারীবাগের মানুষের মতো সাভারের মানুষের ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যাবে, আমাদের ধারণা ছিল না।’
প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘গণশুনানিতে বেশ কিছু পরামর্শ উঠে এসেছে। এগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’