ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া, আহত ৩
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ মিলে এই ধাওয়া দেয়। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়িসহ আশপাশের দোকানপাট।
ধাওয়ায় আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের জেরিন জাহান, নুসরাত জাহান ও লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের নজরুল ইসলাম। ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাসে চলে যান শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২০ মিনিট পর ঘোনাপাড়ায় এসে এলাকাবাসীকে পাল্টা ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা।
ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ সড়কের মিলিত স্থান ঘোনাপাড়া মোড়ে হাজার খানেক শিক্ষার্থী সকাল ১০টা থেকে অবস্থান নেন। এ সময় ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। ধর্ষকদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বেলা তিনটায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা ঘোনাপাড়া মোড়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিন দিনের মধ্যে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। তবে এই আশ্বাস না মেনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। তা মেনে নেন পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা।
তবে রাস্তা না ছেড়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অবস্থানের ফলে ঢাকা ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা শত শত বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন মহাসড়কে আটকা পড়ে। মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এমন অবস্থায় বিকেল পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছাড়তে বোঝাতে যান স্থানীয় লোকজন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থী জেরিন জাহান বলেন, ‘আমরা রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। এমন সময় ছাত্রলীগ ও স্থানীয় লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে।’ একই কথা বলেন নাম প্রকাশ না করা আরও কয়েক শিক্ষার্থী।
তবে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের সঙ্গেই চলে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।
ঘোনাপাড়া গ্রামের আনিস মোল্লা বলেন, ‘ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ার দুই পাশে প্রায় এক হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। আমাদের এলাকার লোকজন ছাত্রদের অনুরোধ করে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে এবং গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী এলাকার মুরব্বিদের ওপর চড়াও হয়। পরে এলাকার লোক তাদের ধাওয়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে দিয়ে আসে।’
গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও ছাত্রী গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগের দিকে ফিরছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচ দুর্বৃত্ত তাঁদের গতিরোধ করে। দুর্বৃত্তরা ছাত্রকে মারপিট করে ওই ছাত্রীকে পাশের নির্মাণাধীন জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজ ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাতে ধর্ষণের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন। সকাল ছয়টা থেকে ঘোনাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ নামেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে ওই রাতেই দুজনকে আসামি করে আমি বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি। গোপালগঞ্জ থানা–পুলিশ ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার শিকার ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ দেখে যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্ষক শনাক্ত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’