বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় চলতি বছরের ২১ মার্চ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর (প্রায় সাত মাস) পর্যন্ত হরিণের ১১টি চামড়া, ২টি মাথা, ১৬টি খুরা ও ২৬ কেজি মাংস জব্দ করেছে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেননি কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
এদিকে হরিণ শিকারের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৬ হাজার একরের হরিণঘাটা বনে দুটি বন কেন্দ্র রয়েছে। তবে বন পাহারা দেওয়ার জন্য আছেন মাত্র চারজন প্রহরী। ওই চারজন প্রহরী লাঠি হাতে বন পাহারা দেন। তবে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড প্রায়ই হরিণের চামড়া জব্দ করলেও হরিণ শিকারিদের তারা আটক করতে পারছে না। আর রয়েছে জনবলের খুবই অভাব।
হরিণঘাটা এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, পাথরঘাটা কোস্টগার্ড ও বন বিভাগ চাইলে হরিণঘাটা বনের হরিণ শিকার বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু কোস্টগার্ড হরিণের চামড়া জব্দ করলেও হরিণ শিকারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর বন বিভাগের তো দৃশ্যমান কোনো অভিযানও নেই। সুন্দরবনের হরিণের চেয়ে হরিণঘাটা বনের হরিণ দেখতে হৃষ্টপুষ্ট ও আকারে বড়। তাই হরিণ শিকারিদের নজর এখন হরিণঘাটা বনে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পাথরঘাটার একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় বন এলাকার কিছু ব্যক্তি ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করেন। তবে স্থানীয় ব্যক্তিরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। একই সঙ্গে হরিণ শিকারের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
বন্য প্রাণী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ওয়াইল্ডটিম। ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামের কোনো মানুষের গৃহপালিত একটি মুরগি বা ছাগল যদি কেউ মেরে ফেলে এ জন্য সালিস বা বিচার ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রা। কিন্তু বনের একটি হরিণ যদি কেউ মেরে ফেলে, তবে তার জন্য আমরা ওইভাবে এগিয়ে আসি না। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা খুবই প্রয়োজন। শুধু আইনশৃঙ্খলা বা বন বিভাগের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় মানুষের সচেতনতাই পারে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে প্রধান ভূমিকা রাখতে।’ তবে আগের চেয়ে মানুষের মধ্যে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অনেক সচেতনতা বেড়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বন বিভাগের আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
পাথরঘাটা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটায় চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ১টায় জিনতলা খালপাড় থেকে ৩টি চামড়া, ১টি মাথা ও ১২টি খুরা জব্দ করে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড। তবে এ ঘটনায় কোস্টগার্ড সদস্যরা কাউকে আটক করতে পারেননি।
একইভাবে ১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটায় পদ্মা মাঝেরচর থেকে একটি হরিণের চামড়া, একটি মাথা ও চারটি খুরা, ১৩ আগস্ট রাত পৌনে একটায় বাদুরতলা খাল থেকে তিনটি হরিণের চামড়া, ২১ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ছোনবুনিয়া থেকে ২৬ কেজি হরিণের মাংস এবং ২৯ মে রাত সাড়ে ১১টায় বাদুরতলা খাল থেকে চারটি হরিণের চামড়া জব্দ করে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড। তবে বরাবরের মতো এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেননি তাঁরা।
ওই হরিণের চামড়া, মাংস, মাথা ও খুরা জব্দের পর কোস্টগার্ড সদস্যরা পাথরঘাটা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। বন বিভাগ এ পাঁচটি ঘটনায় পাথরঘাটা থানায় পৃথক ৫টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। তবে ওই হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণ শিকারিদের আটকের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয়রাসহ বন বিভাগ যদি হরিণ শিকারিদের তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে, তবে হরিণ শিকারিদের আটক করা খুবই সহজ হবে।’