ধরমপাশার চেয়ারম্যানসহ ৪২ জনের নামে থানায় মাছ লুটের অভিযোগ

সুনামগঞ্জ জেলার ম্যাপ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশার সুনই জলমহালে মৎস্যজীবীদের মারধর করে চার লাখ টাকার মাছ লুটে নেওয়ার অভিযোগ থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগটি দেন সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণ (৩৬)। এতে ধরমপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন (৩২), তাঁর বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদসহ (৫৫) ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২৪ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

গত শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে উপজেলার সুনই জলমহালে মাছ লুটের ঘটনা ঘটে বলে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে।

ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সুনই জলমহাল থেকে মাছ লুটের একটি লিখিত অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসন, ধরমপাশা থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুনই জলমহালটি ছয় বছরের জন্য ইজারা পায় ধরমপাশার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। ওই সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ জলমহালটির ইজারামূল্য পরিশোধ করে প্রায় পাঁচ মাস আগে জলমহালটির পাড়ে সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য পাঁচটি খলাঘর তৈরি করেন। অন্যদিকে একই সমিতির সভাপতি দাবি করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারী সুবল বর্মণ জলমহালটির ইজারামূল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিনি সেখানে তিনটি খলাঘর তৈরি করেন। ৭ জানুয়ারি রাতে চন্দনদের খলাঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে খুন হন শ্যামাচরণ।

ঘটনার এক দিন পর স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন, তাঁর ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধরমপাশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নিহত শ্যামাচরণের ছেলে চন্দন। তবে সাংসদের নাম থাকায় পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি বলে অভিযোগ।

তবে পুলিশের দাবি, কিছু ভুল সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে নিহত ব্যক্তির ছেলে চন্দন ও তাঁর লোকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছ থেকে অভিযোগটি নিয়ে আর থানায় জমা দেননি। পরে এ ঘটনায় ধরমপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১০ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৬৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

১৪ জানুয়ারি চন্দন সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধরমপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। বিচারক একই ঘটনা নিয়ে থানায় করা মামলাটির প্রতিবেদন পাওয়ার আগপর্যন্ত আদালতে দায়ের করা মামলাটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। থানায় হওয়া মামলাটি ২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যানের শতাধিক অনুসারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুনই জলমহালটিতে যান এবং তিনটি নৌকায় থাকা প্রায় চার লাখ টাকা মূল্যের মাছ লুটে নেন বলে চন্দনদের পক্ষের অভিযোগ।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, জলমহালটিতে সুবলদেরও তিনটি খলাঘর আছে। ওই খলাঘরের টিন খুলে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন খবর পেয়ে ১৫ থেকে ২০ জন সেখানে গিয়েছিলেন। মাছ লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিপদে ফেলার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

আরও পড়ুন