দড়ি লাফিয়ে দেশসেরা জাকির, স্বপ্ন গিনেস বুকে নাম লেখানোর

দড়ি লাফিয়ে দেশসেরা সৈয়দপুরের জাকির
ছবি: প্রথম আলো

দড়ি লাফে এবার দেশসেরা নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. জাকির হোসেন। ১৬ বছরের এই কিশোর ৫০তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মিনিটে ২৪১ বার দড়ি ঘুরিয়ে সারা দেশে প্রথম হয়েছে। অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চায় জাকির। স্বপ্ন দেখে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তোলার।

সৈয়দপুর উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামে বসবাস জাকিরের। বাবা জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জাকির। মেজ ভাই জাহিদও দড়ি লাফে পারদর্শী।

জাকির আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র। জাকিরের ইচ্ছা দড়ি লাফে বিশ্ব রেকর্ড করার। যখন যেখানে সময় পেয়েছে, সেখানেই প্রতিনিয়ত দড়ি লাফের চর্চা করে সে
গোলাম রাব্বানী, প্রধান শিক্ষক, বোতলাগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়

বোতলাগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র জাকির এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। দারিদ্র্য দাবিয়ে রাখতে পারেনি জাকিরের প্রতিভাকে। জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দড়ি লাফ ইভেন্টে সে একবারও দ্বিতীয় হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে ৩ মার্চ সৈয়দপুরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে, জেলা পর্যায়ে ১১ মার্চ নীলফামারী বড় মাঠে, বিভাগীয় পর্যায়ে ১২ মার্চ রংপুর জেলা স্কুল মাঠে এবং সর্বশেষ ১৫ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে দিনাজপুর জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সব কটি খেলায় সে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। দড়ি লাফ খেলায় জাকির এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সনদ ও পদক পেয়েছে। এখন জাকিরের মনোযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের প্রতিভার জানান দেওয়ার।

বোতলাগাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘জাকির আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র। জাকিরের ইচ্ছা দড়ি লাফে বিশ্ব রেকর্ড করার। যখন যেখানে সময় পেয়েছে, সেখানেই প্রতিনিয়ত দড়ি লাফের চর্চা করে সে।’

জাকিরের বাবা জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে একটি দড়ি নিয়ে লাফাত। তাকে বলতাম, “এসব করে কী হবে বাবা?” সে বলত, “আব্বা আমি একদিন এ খেলা দিয়েই তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করব।”’ জাকিরের মা গৃহিণী নিলুফা বেগম স্বপ্ন দেখেন, তাঁর ছেলে একদিন দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।

কথা হয় দড়ি লাফে দেশসেরা হওয়া জাকিরের সঙ্গে। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘আমার ছোটবেলার স্বপ্নই দড়ি লাফ। আমি ও আমার ভাই ইন্টারনেটে দড়ি লাফের ভিডিও দেখতাম। দেশে ও বিদেশে এ খেলায় অংশ নেওয়ার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা করি। পড়াশোনার পাশাপাশি যখন যেখানে সময় পেতাম, সেখানেই চর্চা করতাম। সব পর্যায়ে প্রথম হয়ে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। এখন আমি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলিম্পিকে খেলতে চাই। গিনেস বুকের রেকর্ড ভেঙে দেশের নাম উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই।’

তৃণমূল থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় উৎসব জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া প্রতিভা বিকাশের একটি বড় ক্ষেত্র। শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকশিত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা সমিতি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।