দ্বিতীয় দিনে বসুরহাটে ঢিলেঢালা অবরোধ
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের (৫২) ওপর হামলার প্রতিবাদে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয় ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মসূচি। প্রথম দিনের তুলনায় আজ রোববার বসুরহাট পৌর এলাকায় অবরোধকারীদের তৎপরতা কিছুটা কম দেখা গেছে।
মিজানুর রহমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সকালে বসুরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীবাহী বাসগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম অভিমুখে ছেড়ে যায়। তবে অবরোধ কর্মসূচির কারণে কবিরহাটের কালামুন্সি থেকে বসুরহাট দিয়ে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি।
মিজানুরের ওপর হামলার ঘটনায় সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে। অবরোধ চলাকালে আজ সকালে কাদের মির্জা তাঁর ৪০ থেকে ৫০ জন অনুসারীকে নিয়ে বসুরহাট বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রচারণা চালান ও মাস্ক বিতরণ করেন।
এ সময় তাঁর এক অনুসারীকে হ্যান্ডমাইকে বলতে শোনা যায়, বসুরহাটে কোনো হরতাল, অবরোধ নেই, প্রশাসন ও মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তৎপর রয়েছেন, করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
সকালে বসুরহাট পৌর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার চলাচল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। আগের দিন ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন সড়কে যেসব ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল তা আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছিল। এসব ব্যারিকেড অপসারণে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাজ করতে দেখা যায়।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গতকাল সন্ধ্যায় বসুরহাট-চারাশিরহাট সড়কে কেটে ফেলা কিছু গাছ সরিয়ে দেওয়ার পর আজ রোববার সকালে পুনরায় ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন মিজানুর রহমানের অনুসারীরা।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মিজানুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত কাদের মির্জা ও তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
গত শনিবার সকাল নয়টার দিকে বসুরহাটের নিত্যন্দন মোড় এলাকায় মিজানুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁর অনুসারীদের অভিযোগ, আবদুল কাদের মির্জার উপস্থিতিতে তাঁর অনুসারীরা মিজানুরের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা মিজানুরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে। একই সময় তারা মিজানুরের সঙ্গে থাকা সাবেক ছাত্রলীগের নেতা হাসিবুল হোসেনকেও কুপিয়ে আহত করে।
তবে আবদুল কাদের মির্জা ফেসবুক লাইভে এসে ওই হামলার ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং আগের একটি হামলার ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্তরা পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় আগের দিন শনিবার দেওয়া ব্যারিকেডগুলো অপসারণে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কাজ করছেন। বর্তমানে বসুরহাটের পরিস্থিতি শান্ত। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
হামলায় গুরুতর আহত মিজানুর রহমানকে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদ জানিয়েছেন, হামলায় মিজানুরের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙে গেছে। কেটে গেছে বাঁ কান।