দৌলতদিয়ায় চার কিমি দীর্ঘ গাড়ির লাইন, গরমে দুর্ভোগ
‘বাবা রে আর পারছি না তো। গাড়িতে বসে থাকতি থাকতি গরমে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়িছি। আমার অবস্থা অহন কাহিল হয়্যা গেছে।’ কথাগুলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা ঢাকাগামী একটি দূরপাল্লার বাসের যাত্রী শামসুন্নাহার বেগমের (৬০)।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির লাইন হওয়ায় ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকা দূরপাল্লার অনেক বাসের যাত্রী প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদেরই একজন শামসুন্নাহার। শনিবার বেলা দুইটার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে গোয়ালন্দের ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত যানবাহনের এ লাইন দেখা যায়।
দৌলতদিয়া ঘাটের একাধিক সূত্র জানায়, প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি ও ঘাটস্বল্পতার পাশাপাশি বেড়েছে গাড়ির চাপ। ঈদের তিন দিন আগে ও পরে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পণ্যবাহী গাড়ি আগেভাগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখীর কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এসব কারণে উভয় ঘাটে গাড়ির বাড়তি চাপ পড়েছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির লাইনে অপেক্ষা করছে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, যাত্রীবাহী বাস। আটকে থাকা গাড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী গাড়ি দ্রুত ফেরিতে ওঠানো হয়। কিন্তু সেগুলোকেও চার-পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি ১০-১২ ঘণ্টার আগে ফেরির নাগাল পাচ্ছে না। প্রখর রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় বাসযাত্রীসহ গাড়িচালক ও সহকারীরা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ির অনেক চালক ক্লান্ত হয়ে আসনেই ঘুমিয়ে পড়ছেন।
শনিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় বাস থেকে হাত ধরে নামিয়ে আনা হচ্ছিল এক বয়স্ক নারীকে। সঙ্গে থাকা আরেক নারী তাঁকে ধরে ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে সড়কের পাশে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কামরুন্নাহার খাতুন নামের ওই নারী বলেন, তাঁর শাশুড়ি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। শাশুড়ির চিকিৎসার জন্য একটি দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় যাচ্ছেন তাঁরা। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে বাসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকায় গরমে তাঁর শাশুড়ি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় নেওয়া হচ্ছে।
ফেরিঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পেছনে লাইনে আটকে পড়েছিলেন সাতক্ষীরা থেকে আসা একটি দূরপাল্লার বাসের চালক রেজাউল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ যেতে প্রখর রোদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এখনো ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পেছনে পড়ে আছি। ফেরিতে উঠতে আরও দুই-তিন ঘণ্টার মতো লাগতে পারে। এই গরমে যাত্রীরা দীর্ঘ সময় বসে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
যশোর থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কাভার্ড ভ্যান নিয়ে নরসিংদীর পাচদোনার উদ্দেশে রওনা করেন চালক মো. সেলিম হোসেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছালে ট্রাফিক পুলিশ আটকে দেন তাঁকে। আজ বেলা দুইটার দিকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকে আছি। মনে হয় না, আজ ফেরিতে উঠতে পারব। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় টাকাপয়সা প্রায় শেষ। কখন নরসিংদী পৌঁছাব—মালের মালিক ফোন করে সেই খোঁজ নিচ্ছেন।’
এদিকে প্রায় আট মাস পর দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটে শনিবার সকালে পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এই ঘাট চালু করতে পন্টুনটি স্থাপন করে। তবে এখন পর্যন্ত ফেরিতে গাড়ি ওঠানামার কাজ শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলছে। দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর আজ সকালে ৬ নম্বর ঘাটে পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। এক-দুই দিনের মধ্যে ঘাটটি চালু হবে।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও শুক্রবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখীর কারণে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এসব কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া উভয় ঘাটেই গাড়ির চাপ রয়েছে।