দৌলতদিয়ায় অন্ধকার কক্ষ থেকে কিশোরী–তরুণীকে উদ্ধার
কিশোরীটিকে পচা-বাসি খাবার দেওয়া হতো। শরীর মোটাতাজাকরণের জন্য খাওয়ানো হতো নানা ধরনের ওষুধ। খদ্দেরদের হাতে তুলে দিতেন বাড়িওয়ালি। কথা না শুনলে তাকে মারধর করা হতো। নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীসহ ১৪ জনকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে অভিযান চালায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। গতকাল বুধবার তাদের আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে যৌনপল্লির নাজমা বেগমের বাড়ি থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্য পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আরও দুই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য পাওয়া যায়। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফা অভিযান চালানো হয়। একটি বাড়িতে বিশেষ কৌশলে তৈরি করা একটি অন্ধকার কক্ষ থেকে ১১ জন কিশোরী-তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের খবর জানতে পেরে বাড়ির তত্ত্বাবধায়কসহ দুজন পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান তাঁর কার্যালয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। পুলিশ সুপার বলেন, একসঙ্গে ১৪ জন কিশোরী ও তরুণীকে উদ্ধার পুলিশের একটি বড় সাফল্য। এ বিষয়ে থানায় মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। উদ্ধার কিশোরীদের নিরাপদ হেফাজতে রাখা হবে। পরিবার চাইলে তাদের সেখান থেকে নিয়ে যাবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। অপরাধীরা যত শক্তিশালীই থাকুক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
৭ মাস আগে বাসায় কাজ করার জন্য এক নারীর কাছে যান। ওই নারী তাঁকে দালালের মাধ্যমে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে তাঁর ওপর নেমে আসে নির্যাতন। বাড়িওয়ালির কথামতো কাজ না করলে মারধর করা হতো।যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া এক তরুণী
উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের মধ্যে একজন (১৫) জানায়, তাঁর বাড়ি রংপুরে। তাঁরা দুই বোন ও এক ভাই। বাবা অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা থাকেন। সংসারের খরচ তেমন দেন না। প্রায় চার মাস আগে কাজের সন্ধানে এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সে ঢাকায় আসে। সেখানে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সে। তাকে একটি পারলারে ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার আশ্বাসে নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে। পরে নাজমা বাড়িওয়ালির কাছে বিক্রি করে দেন।
১৮ বছরের এক তরুণী জানান, সৎ মায়ের সংসারে থাকতেন। ৭ মাস আগে বাসায় কাজ করার জন্য এক নারীর কাছে যান। ওই নারী তাঁকে দালালের মাধ্যমে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে তাঁর ওপর নেমে আসে নির্যাতন। বাড়িওয়ালির কথামতো কাজ না করলে মারধর করা হতো। এখান থেকে কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
আরেক তরুণী জানান, তাঁর বাড়ি জামালপুরে। বাড়িতে ঠিকমতো খাবার পেতেন না। পরিবারের কথা চিন্তা করে গত কোরবানির ঈদের আগে ঢাকায় আসেন। পোশাক কারখানায় কাজের সন্ধান করতে থাকেন। অপরিচিত এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসেন যৌনপল্লিতে। নাজমা বেগমের কাছে বিক্রি করে দেন। তাঁদের আয়ের টাকা বাড়িওয়ালি ও তাঁর লোকজন নিয়ে যান। তাঁদের শুধু পেটে-ভাতে রাখা হয়। কোথাও বের হতে দেওয়া হয় না। যৌনপল্লিতে পুলিশ ও সাংবাদিক এলে তাঁদের বাড়ির একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হতো।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সালাহ উদ্দিন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক সাইদুর রহমান, রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।