দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নতুন করে ২০০ মিটার এলাকায় ভাঙন
পদ্মা নদীতে তৃতীয় দফা পানি বৃদ্ধির কারণে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। আর এতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ২০০ মিটার এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ২ ও ৩ নম্বর ফেরিঘাট। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে যেকোনো মুহূর্তে গত বছরের মতো ঘাট এলাকা বিলীন হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে আজ সোমবার দেখা যায়, দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ মিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২ নম্বর থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের প্রায় ২০০ মিটার এলাকার কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২ নম্বর ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কের মাথার অংশবিশেষ ইতিমধ্যে ভেঙে বিলীন হয়েছে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট। বর্ষা–পরবর্তী সময়ে দুটি ঘাটে সংস্কারকাজ করে প্রস্তুত করা হয়। এ বছর নতুন করে ২ নম্বর ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে সড়কের মাথায় ইটভর্তি বস্তা ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এরপরও সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে বিলীন হয়েছে। ঘাটের এক পাশে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই বলগেট থেকে মাল খালাস করতে দেখা গেছে আজও। এ ছাড়া ৩ নম্বর ফেরিঘাটসংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়াতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের কারণে ৩ নম্বর ফেরিঘাটও হুমকিতে পড়েছে। ভাঙন থেকে কয়েক গজ দূরেই ৩ নম্বর ঘাট দিয়ে ফেরিতে আজও যানবাহন ওঠানামা করছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ৩ নম্বর ঘাটটি চরম ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ফেরিসংশ্লিষ্ট লোকজন। ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হওয়ায় ফেরিঘাট রক্ষা ও যানবাহন পারাপারে বিপর্যয় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ফেরিঘাটসংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ওই পাড়ার মোকবুল শেখ বলেন, ‘গত বছর ১ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে মজিদ শেখের পাড়ায় ভাঙনে ভিটেমাটি বিলীন হলে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে এসে ঘর তুলি। এ বছর এখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বিকল্প উপায় বের করতে হবে। কিন্তু কোথায় যাব, তা ভেবে পাচ্ছি না। এ নিয়ে আমরা এখানকার প্রায় ১০০ পরিবার দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছি।’
বন্যার আগপর্যন্ত লঞ্চঘাট থেকে ৬ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছি। এরপরও লঞ্চঘাট থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ মিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে।নিজাম উদ্দীন, নির্বাহী প্রকৌশলী, বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, লঞ্চঘাট থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। এবারও লঞ্চঘাট থেকে ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মজিদ শেখের পাড়ার প্রায় ৫০০ পরিবার এবং ২-৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার সিদ্দিক কাজী পাড়ার প্রায় ৩০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। ইতিমধ্যে বিষয়টি রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ কাজী কেরামত আলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মেরিন আবদুস সাত্তার বলেন, প্রতিবছর সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে এবারের ভাঙন ঠেকানো না হলে গত বছরের মতো এবারও ফেরিঘাট বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিআইডব্লিউটিএকে জানিয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন পাঠান বলেন, বন্যার আগপর্যন্ত লঞ্চঘাট থেকে ৬ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছেন তাঁরা। বন্যা–পরবর্তী সময়ে লঞ্চঘাট থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ মিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বেশি। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।