দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কাদাপানিতে দুর্ভোগ
টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও এর আশপাশের সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। ফেরি ও ঘাটসংকটের পাশাপাশি টানা বৃষ্টি আর খানাখন্দে ভরা সড়ক সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেরি ও ঘাটসংকটের কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহন পারাপার ব্যহত হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি রো রো (বড়) ফেরি পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়ার পর থেকে ফেরিসংকট বেড়ে যায়। এর কিছুদিন পরই চারটি রো রো ফেরি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। গত শনিবার এক দিনে আরও দুটি রো রো ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে পড়ায় দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথে এখন ২০টির মধ্যে ১৪টি ফেরি চালু রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়ায় সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট চালু রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুই দিনের বৃষ্টিতে প্রায় প্রতিটি ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুন কাদায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম ৫ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুনের বেহাল দশা হয়েছে। এতে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামার জন্য চালকদের বাড়তি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জ যাচ্ছিলেন এনামুল হক। শনিবার বিকেলে গ্রামের বাড়ি আসার পর বৃষ্টির কারণে তিনি আর বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। আজ সকালে ৫ নম্বর ঘাটে কাদাপানি দেখে স্ত্রীকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে দিলেও গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে এনামুল পন্টুনেই পিছলে পড়ে যান।
এদিকে ফেরি ও ঘাটসংকটের কারণে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বাড়তি দুর্ভোগ হিসেবে যোগ হয়েছে জরাজীর্ণ সড়ক। ৩ নম্বর ফেরিঘাট থেকে শুরু করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে কাদাপানি জমে থাকায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা ট্রাকচালক ইমরান শেখ জানান, গত রোববার দুপুরে তিনি গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছান। এরপর কাল সারা দিন পথে অপেক্ষার পর আজ সকালে তিনি ফেরিঘাট সড়কে পৌঁছাতে পেরেছেন। ইমরান শেখ বলেন, গাড়ির দীর্ঘ সারি। এর সঙ্গে দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করা বেশ কষ্টকর।
চট্রগ্রামগামী ট্রাকচালক জসিম শেখ বলেন, ‘দুই দিন ধরে রাস্তায় বসে আছি। বৃষ্টির মধ্যে সহজে গাড়ি থেকে নামাও যায় না। গাড়ি থেকে নেমে কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গাও তো নাই।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জামাল হোসাইন বলেন, সম্প্রতি আরও দুটি ফেরি বিকল হওয়ায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। তবে ঘাট স্বল্পতা থাকলেও মূলত ফেরি কম থাকায় গাড়ি পার করতে সময় বেশি লাগছে। বৃষ্টির কারণে বাড়তি দুর্ভোগ যোগ হয়েছে। ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পন্টুন কাদাপানিতে পিচ্ছিল হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।