দৌলতদিয়া ঘাটে পণ্যবাহী গাড়ির জট, ১ কিলোমিটার যেতে ২ ঘণ্টা
তুলাবোঝাই ট্রাক নিয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের কাছাকাছি আসেন নাসির উদ্দিন। ওই সময় ঘাট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের সারিতে ছিলেন তিনি। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় তিনি ঘাট থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। অর্থাৎ, প্রায় আট ঘণ্টায় মাত্র তিন কিলোমিটার পথ যেতে পেরেছেন ওই ট্রাকচালক।
ক্লান্ত নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তা আর ফুটপাত হচ্ছে আমাদের জায়গা। এখানে গোসলের জায়গা নাই, খাওয়ার জায়গা নাই, ঘুমানোরও জায়গা নাই। আরও দুই কিলোমিটার গেলে ফেরির নাগাল পাব। আমাদের অহন একুল নাই, ওকুলও নাই। আছে শুধু পানি আর আল্লাহ।’
আজ সকাল থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে পণ্যবাহী গাড়ির সারি। এর মধ্যে ফেরিঘাটের কাছাকাছি দুই কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের সারিতে বেশকিছু যাত্রীবাহী পরিবহনও দেখা যায়। যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ফেরির দেখা পেলেও পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
প্রখর রোদ আর গরমে আটকে থাকা গাড়িচালক, চালকের সহকারী ও বাসের যাত্রীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। দীর্ঘ যানজটের কারণে কয়েকটি পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও চালকের সহকারীদের ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ির ভেতরেই ঘুমাতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ রাস্তার পাশের দোকান বা গাছের নিচে ছায়ায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকামুখী গাড়িগুলো ফেরিঘাটের দিকে এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। মহাসড়কের পাশে খাওয়াদাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না বলে জানান তাঁরা।
মানিকগঞ্জগামী ট্রাকের চালক সুকুর মোল্লা জানান, গতকাল দিবাগত রাত ১১টায় ঘাট এলাকায় আসেন তিনি। প্রায় ১০ ঘণ্টায় তিনি ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো! এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও কয়েক শ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আটকায় আছে। যাত্রীবাহী গাড়ির সঙ্গে পাশাপাশি কিছু পণ্যবাহী গাড়িও ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত।’
ঈগল পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক ভরত মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন দুপুরের দিকে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন আসতে থাকে। এসব পরিবহন একসঙ্গে ঘাট এলাকায় এসে পৌঁছায় বলে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। আবার বিকেলের দিকে কাঁচা সবজির গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করে। এ কারণে সন্ধ্যা থেকে ঘাটে চাপ বাড়তে শুরু করে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, ফেরি পর্যাপ্ত থাকলেও ঘাটের স্বল্পতা আছে। আবার বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে গাড়ির বাড়তি চাপ পড়ছে। দৌলতদিয়ার পাঁচটি ঘাটের মধ্যে মাত্র দুটি বড় এবং তিনটি ছোট ফেরির ঘাট রয়েছে। বড় ফেরির জন্য বড় পন্টুন বসানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে।