দুই বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে গেল জুলি
হারিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে গেল মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী জুলি। জামালপুরের মেয়ে জুলি হারিয়ে যাওয়ার পর এই দীর্ঘ সময় তার কেটেছে টাঙ্গাইল ও কাশিমপুর কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে। তার পরিবার ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিল। কারা হেফাজতে চিকিৎসার পর জুলি কিছুটা সুস্থ হয়ে তার মা-বাবা ও বোনের নাম এবং বাড়ি জামালপুর ও তার স্কুলের নাম বলতে পেরেছিল।
১০ জুলাই টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলামের আদালতে জুলিকে হাজির করার পর বিচারক জুলির বলা ঠিকানার সূত্র ধরে টাঙ্গাইল ও জামালপুরের সমাজসেবা কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এবং টাঙ্গাইলের জেল সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে কর্মকর্তারা জুলির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে তার পরিবারকে খুঁজে বের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। তখন সে নিজের নামও বলতে পারেনি। পরে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করে তাকে আদালতে পাঠায়। আদালত তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। মানসিক রোগী হওয়ায় মেয়েটিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলে। চিকিৎসা পেয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আবার টাঙ্গাইলে আনা হয়।
১০ জুলাই জুলিকে টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হলে সে জানায়, তার নাম জুলি। মায়ের নাম মরিয়ম, বাবার নাম শাহীন, জামালপুরের ইকবালপুর নামক স্থানে তাদের বাড়ি। হাজিপুর বটতলায় নেওয়া হলে সে বাড়ি চিনতে পারবে। সে হাসানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। এসব কথা জানার পর বিচারক তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জামালপুরে খোঁজ নেন এবং তার পরিবারকে খুঁজে বের করেন। জুলির মায়ের মাধ্যমে টাঙ্গাইল সমাজসেবা বিভাগের প্রবেশন কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব মিয়া জানতে পারেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর জুলিকে তার মা ময়মনসিংহে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রায় দুই বছর আগে সে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত জুলিকে পাওয়ার আশা তাঁরা ছেড়েই দিয়েছিলেন।
গত শনিবার জুলির মা হোসনে জান্নাত মরিয়ম, বোন মারিয়া ও তাঁদের এক মামা টাঙ্গাইলে এসে জুলিকে নিয়ে যান। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের দেখা পেয়ে জুলি কান্নায় ভেঙে পড়ে। সমাজসেবা বিভাগের প্রবেশন কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব মিয়া জানান, সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জুলির পরিবারের সদস্যরা বিচারক, কারা কর্তৃপক্ষসহ জুলিকে খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।