দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

জামিন পাওয়ার পর উজির মিয়াকে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের লোকজন
ফাইল ছবি

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশি নির্যাতনে উজির মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। নিহত উজির মিয়ার ছোট ভাই ডালিম মিয়া বাদী হয়ে আজ সোমবার সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদারের আদালতে মামলাটি করেন।

মামলায় শান্তিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ সূত্রধর ও এসআই আলা উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খায়রুল কবির বলেন, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩–এর ১৫(২) ধারায় মামলাটি হয়েছে।

মৃত উজির মিয়ার বাড়ি শান্তিগঞ্জের শত্রুমর্দন গ্রামে। ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ বাড়ি থেকে উজির মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চুরির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশি হেফাজতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।

মামলার আরজিতে বাদী ডালিম মিয়া উল্লেখ করেন, তাঁদের গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে প্রায় প্রতি রাতেই চুরি হচ্ছিল। উজির মিয়ার বাড়িতেও চুরি হয়েছিল। পরে উজির মিয়াসহ গ্রামের ভুক্তভোগীরা একই গ্রামের তিনজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে গত ২০ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে মামলার আসামি দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ থানা-পুলিশ ৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উজির মিয়ার বাড়িতে যান। তাঁরা উজির মিয়াকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যেতে থাকেন। তাঁর মাথায় আসামির হাতে থাকা একটি টর্চ লাইট দিয়ে আঘাত করা হয়।

এসআই আলা উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে উজির মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যোগযোগ করা হয়। আলা উদ্দিন তখন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উজির মিয়াকে থানায় নেওয়া হচ্ছে। সকালে যেন তাঁরা থানা থেকে তাঁকে নিয়ে আসেন। কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন তাঁকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর তাঁরা জানতে পারেন, একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর আদালত থেকে ওই দিনই জামিন পান উজির মিয়া।

বাদী ডালিম মিয়া আরও উল্লেখ করেন, উজির মিয়া তাঁদের জানান, থানায় নিয়ে তাঁকে চোখ–মুখ বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ওই রাতেই সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁকে আবার বাড়িতে নেওয়া হয়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে এলাকার কৈতক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার পর আজ ডালিম মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাঁকে থানায় ধরে নিয়ে চোর অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

ঘটনার পর অভিযুক্ত এসআই দেবাশীষ সূত্রধরকে শান্তিগঞ্জ থানা থেকে দিরাই থানায় বদলি করা হয়েছিল। গতকাল রোববার তাঁকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এসআই আলা উদ্দিন শান্তিগঞ্জ থানায় কর্মরত। ঘটনার দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মুক্তাদীর হোসেন ছুটিতে থাকায় আলা উদ্দিন তাঁর দায়িত্বে ছিলেন।