দুই দফা জরিমানার পরও বসেছিল পশুর হাট
লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুর হাট বসেছে—এমন খবরে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর গাড়ি দেখেই ভোঁ দৌড় দেন ক্রেতা-বিক্রেতা। পরে ইজারাদারকে সতর্ক করে ন্যূনতম জরিমানা করা হয়। সেদিনের পর একই অভিযোগে দ্বিতীয় দফা জরিমানা করা হয় ইজারাদারকে। এরপরও আজ শনিবারও বসেছিল হাট। এ জন্য তৃতীয়বারের মতো জরিমানা গুনেছেন ইজারাদার।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি হাটে। জেলার অন্যতম পশুহাট খোঁচাবাড়ি। সারা দেশ থেকে ক্রেতারা পশু কিনতে এখানে আসেন। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। এই দুই দিন হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে ক্রেতা-বিক্রেতা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করেন।
আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় লকডাউন জারি করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার যে নির্দেশনা দেওয়া হলেও হাটে সেটির কোনো বালাই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। আবার মাস্ক থাকলেও তা নামিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। সে সময় এই প্রতিবেদককে ছবি তুলতে দেখে ছুটে আসেন হাটের ইজারাদার উত্তম কুমার রায়। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন রায়হান ইসলাম নামের এক যুবক ও হাটের ইজারার অংশীদার গনেশ কুমার ঘোষ। সে সময় গনেশ কুমার ঘোষ এই প্রতিবেদকের হাতে কিছু টাকা গুজে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গনেশ কুমার ঘোষ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর ২২টি হাট বসাতে পারেননি। এ কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েছেন। এবারও একই অবস্থা। জেলা প্রশাসন হাট বন্ধ রাখতে বললেও ইজারার টাকা কমাচ্ছে না। নিরুপায় হয়েই হাট বসাতে হচ্ছে। তবে কেনাবেচার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে সচেতন করা হচ্ছে।
ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ এপ্রিল শনিবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাট বসানোর অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হাট থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেন। পরে আদালতের বিচারক সদর উপজেলার ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন হাটের ইজারাদার উত্তম কুমার রায়কে সতর্ক করে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর দুই দিন পর গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) হাটের দিন সেখানে আবার পশু কেনাবেচা শুরু করেন ইজারাদার। জানতে পেরে ইউএনও আবারও সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। সেদিন ইজারাদারকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
আজ আবারও খোঁচাবাড়িহাট বসে। ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে কেনাবেচা চলার সময় অভিযান চালান ইউএনও। পরে তিনি ইজারাদারকে তৃতীয়বারের মতো ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
স্বাস্থ্যবিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলার সব হাটই নিয়মিত বসছে। বিষয়টির প্রতি প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত। হাটে যেভাবে জনসমাগম হচ্ছে, তাতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষার প্রধান অস্ত্রই হলো স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা।
ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে ঠাকুরগাঁওয়ের হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা বন্ধ রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি হাটের ইজারাদারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রতিটি হাটবারে খোঁচাবাড়িহাট বসিয়েছেন ইজারাদার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাট বসানোয় তাঁকে দুই দফা জরিমানা করা হয়। আজও তাঁকে জরিমানা করা হলো। এরপর অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে হাট-বাজারকে চিহ্নিত করেছে। সে কারণে হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাট বন্ধ থাকার কারণে ইজারামূল্য কম নেওয়া তাঁদের হাতে নেই, বিষয়টি মন্ত্রণালয় বিবেচনা করতে পারে।