বিশেষ সাক্ষাৎকার: অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান
দুই কৃষকের মৃত্যু দীর্ঘ অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ
* বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে একধরনের সামন্ত প্রভু তৈরি হয়েছে। এরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
* প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সুশাসনের ব্যর্থতা আছে। সুশাসন বজায় রাখতে তারা আশানুরূপ যত্নবান হয়নি, এটা বলা যায়।
* পানিসংক্রান্ত আইন ও বিধিগুলোর কার্যকর প্রয়োগ দরকার। এর পাশাপাশি পানি সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে।
বৃহত্তর রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি জমিতে সেচের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা আলোচনায় এসেছে। এর মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট ও ন্যায্যতা, পানির সরবরাহ–ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এবার বিশ্ব পানি দিবসের (২২ মার্চ) মূল বিষয় ছিল ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ে। পানি দিবসের দুই দিন পর রাজশাহীতে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। পরিবার বলছে, সেচের পানি না পেয়ে তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন। এই পরিস্থিতি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সারওয়ার জাহান: শুধু পানি দিবস নয়, স্বাধীনতা অর্জনের মাসেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। তারপরও দুটি প্রাণ চলে গেল। সেচে পানি দিতে না পেরে দুই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি এখনো পুলিশের তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে যে অভিযোগ উঠেছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই বলি, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ীদের শাস্তি হোক, এটা প্রত্যাশা করি। পানি ব্যবস্থাপনায় বড় অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ এ ঘটনা, তাতে সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: যতটুকু জানা গেছে, ওই দুই কৃষক ১২ দিন ধরে পানির জন্য ঘুরেছেন। কেউ তাঁদের কথা শোনেনি। এমন নয় যে তাঁরা বিনা পয়সায় পানি চেয়েছিলেন। পানি ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক আধিপত্যের বিষয়টিও সামনে আসছে।
সারওয়ার জাহান: যে ঘটনা ঘটেছে, তা একটি দীর্ঘ অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ। দেশের অন্য অনিয়ম থেকে এর ভিন্নতা নেই। বরেন্দ্র প্রকল্পের অধীন সেচের কাজ গত শতকের ১৯৮০-এর দশকে শুরু হয়। সামরিক সরকারের আমলে অনিয়মের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, দেশে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার ধারাবাহিকতা রয়ে গেল। দিন দিন তা আরও বেড়েছে বলা চলে। আমাদের সমাজের সবখানেই সুবিধাভোগী এবং উচ্চপর্যায়ের মানুষের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা দেখা যায়। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় দেখা যায়নি। সুশাসনের অভাবে আধিপত্য বিস্তারের চলমান সংস্কৃতি এখানেও দৃশ্যমান। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে একধরনের সামন্ত প্রভু তৈরি হয়েছে। এরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রান্তিক মানুষকে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর
নির্ভর করতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এসব পানি সামন্ত প্রভুদের নৈরাজ্যের বড় শিকার হচ্ছেন প্রান্তিক মানুষ।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১৬ হাজার গভীর নলকূপ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানির সমস্যা বেশি। অভিযোগ আছে, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিএমডিএ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে কী বলবেন?
সারওয়ার জাহান: প্রথম দিকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অধীন বরেন্দ্র প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পরে বিএমডিএ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে। উত্তরাঞ্চলের খরাপীড়িত এই অঞ্চলে সেচসুবিধা দেওয়া ছিল এক অনন্য উদ্যোগ। এ অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং দারিদ্র্য কমাতে এই সেচ প্রকল্পের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমরা এক গবেষণায় দেখেছি, স্থানীয় সরকার, বিএডিসিসহ পানি সরবরাহের অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বরেন্দ্র প্রকল্পের মান অপেক্ষাকৃত ভালো। কিন্তু দিন দিন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার হওয়ার ফলে মাঠপর্যায়ের মানুষ সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে। বিএমডিএর অর্জনগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সুশাসনের ব্যর্থতা আছে। সুশাসন বজায় রাখতে তারা আশানুরূপ যত্নবান হয়নি, এটা বলা যায়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁয় সরকারি সেচের বাইরে ৫৬ হাজার বেসরকারি ব্যক্তিগত নলকূপ আছে। সরকারি নলকূপগুলোর অপারেটর বা বেসরকারি নলকূপের অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির চেয়ে অর্থ ও রাজনীতির প্রাধান্যই থাকে। আপনার মূল্যায়ন কী।
সারওয়ার জাহান: রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের প্রতিপত্তি এখানে বড় ভূমিকা রাখে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ তারাই নিয়ে নেয়। মূলত দলীয় নেতা-কর্মী, অনুসারী ও সমর্থকেরা নলকূপগুলোর অপারেটর হয়। এখানে অপারেটর নির্বাচন এবং বেসরকারি নলকূপের অনুমোদনের ক্ষেত্রে অর্থের প্রভাব নেই, তা বলা যায় না। পুরো প্রক্রিয়া একটি দুষ্টচক্রে জড়িয়ে গেছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পানির জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগও আছে। নলকূপ অপারেটররা জমিতে পানি সরবরাহে নলকূপের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের খরচের জন্যও কৃষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ফসল নেন। নলকূপ নষ্ট হয়ে গেলে তাঁদের কাছ থেকে মেরামত খরচের টাকাও নেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী মেরামত খরচ অপারেটরেরই বহন করার কথা। এসব বিষয়ে আপনাদের কোনো পর্যবেক্ষণ আছে?
সারওয়ার জাহান: মাঠপর্যায়ের এসব অভিযোগ আমিও শুনি। এটুকু বলি, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা উচিত। আমার উপলব্ধি এই যে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে অনিয়মের ভূত বাসা বেঁধেছে। একে তাড়াতে না পারলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য বিএমডিএ কৃষকদের স্মার্ট কার্ড দিয়েছে। অথচ নলকূপের অপারেটররা কৃষকদের স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করতে দেন না। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব কার, তারা কতটুকু তা পালন করছে?
সারওয়ার জাহান: স্মার্ট কার্ড ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পানির পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য এটি চালু করা হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে স্মার্ট কার্ডের বিতরণ নিয়েই অপব্যবহার শুরু হয়েছে। এটা দেখভালের দায়িত্ব বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। তবে এখানেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কথা এসে যায়। তাদের প্রভাববলয় থেকে কর্তৃপক্ষও মুক্ত নয়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা কেমন? এক দশকে কী পরিবর্তন দেখছেন।
সারওয়ার জাহান: বরেন্দ্র এলাকায় একসময় এক ফসলি জমি ছিল। এখন বেশির ভাগ জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের আয় ক্ষমতা বেড়েছে। বেশি ফসলের জন্য বেশি পানির দরকার। তাই পানির চাহিদাও বেড়েছে। সুপেয় পানি শুধু কৃষিজমিতে নয়, এ পানি দিয়ে মাছের চাষও হচ্ছে। সবই হচ্ছে কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে। বরেন্দ্র এলাকার জমির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটা বন্যামুক্ত এলাকা। দেশের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে বর্ষা মৌসুমেও এখানে ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। বর্ষাকালেও এখানে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দিতে হয়। এখন প্রতিবছর এক ফুট করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। এক দশক আগেও তা ছিল ছয় ইঞ্চি। এখানে পানির স্তরের যে বৈশিষ্ট্য, তাতে ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে পানি পাওয়া যায়। এরপর কাদার স্তর। ঠিক এই মুহূর্তে গভীর নলকূপের পানি পেতে ৯০ ফুট নিচে যেতে হয়। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে একসময় পানিসংকট ভয়াবহ রূপ নেবে। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ইংরেজি চারটি ‘আর’–এর নিশ্চয়তা দরকার। সেগুলো হলো ‘রিচার্জ’ বা পুনর্ভরণ, ‘রিইউস’ বা পুনর্ব্যবহার, ‘রিসাইকেল’ বা প্রক্রিয়াজাত এবং ‘রেসটর’ বা পুনরুদ্ধার। এখানকার অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলে পানি ধরে রাখা যায় না। আত্রাই, মহানন্দা ও পদ্মায় এ পানি গড়িয়ে যায়। পানির রিচার্জ বা পুনর্ভরণের হার এখানে অপেক্ষাকৃত অনেক কম। পরিস্থিতি তাই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে প্রতিদিন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এ অঞ্চলে বিকল্প চাষাবাদের কথা বলা হচ্ছে। নওগাঁর কৃষকেরা বোরো থেকে আমে চলে গেছে অনেকেই। কিন্তু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটা হয়নি। বিকল্প চাষাবাদের জন্য কী করা হচ্ছে?
সারওয়ার জাহান: পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি ঘোষিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে হলো পানি আইন। আর ২০১৮ সালে এর বিধিমালা হয়েছে। এসব আইন ও নীতিতে পানির সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। এর জন্য সরকারিভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিকল্প চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা। এ অঞ্চলে মাল্টা, ড্রাগনের মতো অপ্রচলিত ফলের চাষ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ তুলা চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে একজন কৃষক ১৬ মণ পর্যন্ত তুলা পেতে পারেন। তিন হাজার টাকা প্রতি মণে দাম পাওয়া যায়। তাই একজন কৃষক চাইলে তুলা বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় আয় করতে পারেন। তুলা পানিসাশ্রয়ী শুধু নয়, এর চাষ কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করে। এখন এসব বিকল্প চাষে প্রান্তিক মানুষকে সম্পৃক্ত করাটা হলো বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশির ভাগ কৃষক প্রান্তিক। অনেক সময় এসব উদ্ভাবনের সুফল প্রান্তিক মানুষ পায় না। এ ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ত করতে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা আরও বাড়বে বলে একাধিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির সুরক্ষায় এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
সারওয়ার জাহান: সরকারি নানা দলিলে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমিয়ে ভূ–উপরিস্থিত পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি বিষয় জরুরি। সেগুলো হলো: সঠিক পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা এবং জনগণের অংশগ্রহণ। এর জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারি স্তরে বরেন্দ্র অঞ্চলে পাইলট ভিত্তিতে এর কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এগুলো ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়েছে। এখন বৃহত্তর পরিসরে এসবের প্রয়োগ দরকার।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সমস্যা তীব্র হয় শুকনো মৌসুমে। পানির অতি আহরণে এ সমস্যা আরও বাড়ছে। শুকনো এ অঞ্চলে পুকুরগুলো হতে পারত পানির এক একটি সংরক্ষণাগার। কিন্তু দিন দিন পুকুরের সংখ্যা কমছে। সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার কাজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুকুর নিশ্চিত করতে হবে। পুকুরের গভীরতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এসব পুকুর বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে পারে। আবার কৃষিজমির পাশের খাঁড়িগুলোতে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব যে খুব বড় পরিসরে হচ্ছে, তা বলা যাবে না।
ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এ–সংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় সরকারের মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পানি আইনে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনার সমন্বয় কমিটির কথা বলা আছে। এসব কমিটিকে সক্রিয় করতে হবে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কমিটিগুলোকে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে হবে, তাদের তো কারিগরি জ্ঞান নেই। কোন অঞ্চলটির পানির কী অবস্থা, কোথায় কোন ধরনের পানি উত্তোলনের পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে বা কোথায় করা যাবে না—এ বিষয়গুলো মাঠে জানাতে হবে। সেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আইনে আছে, বাস্তবে প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রান্তিক মানুষের সুবিধার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সারওয়ার জাহান: পানিসংক্রান্ত আইন ও বিধিগুলোর কার্যকর প্রয়োগ দরকার। এর পাশাপাশি পানি সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবল থেকে পানি সরবরাহ খাতকে উদ্ধার করতে হবে, এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দুই কৃষকের মৃত্যু আমাদের বুঝিয়ে দিল, আমরা সব মানুষের সমানাধিকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি।