দুঃসময়ে মানুষের পাশে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা
দুর্দিনতো আর বলে কয়ে আসে না। আবার এ রকম একটা দুর্দিন আসতে পারে, এটা কারও ধারণাতে ছিল না। কিন্তু দুর্দিনটা কিনা একেবারে ঘরের ভেতরে এসেই হানা দিল। সবাই খুব ভালো ছিলেন, এমনটা হয়তো বলার সুযোগ নেই। অনেকেরই টানাপোড়েন গা সওয়া। তবু বেলা কাটছিল সবারই। দিন শেষে হাতে নিয়ে ঘরে ফেরার মতো কিছু অর্জন অনেকেরই ছিল। হঠাৎ করেই যেন এই সামর্থ্যটুকু হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে। সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। সংসারের চাকা দেবে গেছে দুঃসময়ের কাদায়।
এই কাদায় আটকে পড়া মানুষগুলোকে কিছুটা হলেও শুকনো মাটিতে পা রাখার সুযোগ তৈরি করে দিলেন এলাকার একটি বিদ্যালয়ের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা অর্থ জোগাড় করলেন। খোঁজ-খবর নিয়ে অভাবী মানুষের তালিকা করলেন। হাজার মানুষের ঘরে পৌঁছে দিলেন খাদ্যসামগ্রী। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এই উদ্যোগে শামিল ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফ্রান্স প্রবাসী সাজিদ রুহেলসহ কয়েকজন ৭ মে প্রাথমিক উদ্যোগটা নেন। কিভাবে সংকটে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পোস্ট দেন। তাতে প্রচুর সাড়া মেলে। একে একে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন ব্যাচের তিন শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। শুরুতে দেশ-বিদেশের কয়েকজন নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে গঠন করলেন প্রাথমিক তহবিল। মাত্র সাত দিনেই তহবিলে জমা হয় পাঁচ লাখ ১৫ হাজার টাকা। টাকা সংগ্রহের পর উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের কর্মহীন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ১৯ মে শুরু হয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম। ২২ মে বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ওই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের এক হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে চাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, লবণ, ময়দা, সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
সাজিদ রুহেল বলেন, ‘গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। আমাদেরও কাজ নেই। সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হচ্ছে। সংকটের এই সময়ে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করি। তাদের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে। এরপর আমি যে হাইস্কুলে পড়ালেখা করেছি, সেই স্কুলের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। এরপর বিষয়টি কয়েকজন প্রবাসীকেও শেয়ার করি। আমরা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলি। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে। কল্পনা করিনি এত তাড়াতাড়ি সবাই সাড়া দেবে। মানুষের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে।’
এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে সংকটে বিপন্ন মানুষকে সহযোগিতা করাই উদ্দেশ্য বলে জানান কাঁঠালতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিক্ষক ইমন চৌধুরী, ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও কুয়েত প্রবাসী নজরুল ইসলাম।
বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, কাঁঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এটা নিঃসন্দেহে মহৎ। তাঁদের মতো সবাই এগিয়ে আসলে অসহায় মানুষ অন্তত খাদ্য সংকটে পড়বে না। তাঁদের এই উদ্যোগ একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।