নতুন ঘর পেয়ে খুশি পানছড়ির সাঁওতালরা
পানছড়ির বড় সাঁওতালপাড়ার বিধবা দুই বোন জনিয়া সাঁওতাল ও ময়না সাঁওতাল। বেড়ার একটি ভাঙা ঘরে তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকতেন। সামান্য বৃষ্টি হলে বেড়ার ফাঁক গলে পানি ঢুকত। সন্তানদের নিয়ে সারা রাত জেগে থাকতেন। দিনমজুর দুই বোনের সামর্থ্য ছিল না নতুন ঘর মেরামত করার। এই ঘরে বসবাসই যখন নিয়তি ভাবা শুরু করলেন, তখন উপজেলা প্রশাসন সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ডিজাইনের একটি আধপাকা বাড়ি পেয়েছেন জনিয়া সাঁওতাল। এখন সেই ঘরে সন্তানদের নিয়ে থাকছেন দুই বোন।
শুধু জনিয়া সাঁওতাল নয়, এই পাড়ায় বিধবা রুপসী সাঁওতালও পেয়েছেন একটি নতুন ঘর। রুপসী সাঁওতাল বলেন, আট বছর আগে স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিন মেয়েকে নিয়ে দুই কক্ষের পুরোনো ভাঙা ঘরে থাকতেন। ঘর ভিটে ছাড়া কোনো জায়গাজমি নেই। দিনমজুরের কাজ করে দুই মেয়েকে কলেজে এবং এক মেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। উপার্জনের বেশির ভাগ সন্তানদের পড়াশোনায় খরচ করতে হতো বলে ঘর মেরামত করা তাঁর কাছে বিলাসিতাই ছিল। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ঘর পেয়ে তাই তিনি দারুণ খুশি।
এমন ১১টি সাঁওতাল পরিবার আধপাকা ঘর পেয়েছে।
বড় সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দা মিলন সাঁওতাল বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় ৬৫টি পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ দরিদ্র ও দিনমজুর। এই পাড়ায় কারও আধপাকা বাড়ি নেই, সামর্থ্যও নেই। সরকারের কাছ থেকে ১১টি পরিবারকে আধপাকা ঘর করে দেওয়ায় পাড়াবাসী খুশি।’ তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে উপজেলা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি পানছড়ি সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বড় সাঁওতালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য তৈরি ঘরগুলোতে উঠে গেছে প্রতিটি পরিবার। প্রত্যেকটি ঘর তিন রুমের। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর, বারান্দা, গোসলখানা ও শৌচাগার। এ ছাড়া প্রতিটি ঘরে বসানো হয়েছে ৫০ ওয়াটের সোলার বিদ্যুৎ।
পানছড়ি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আশ্রয়ণ দুই প্রকল্পের কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য নয়টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির জন্য বরাদ্দ ছিলো ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এছাড়া গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্প থেকেও সাঁওতালদের দুইটি ঘর দেওয়া হয়েছে।
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় পানছড়িতে সাঁওতালরা অনেক পিছিয়ে। তাই বিশেষ বিবেচনার ভিত্তিতে উপজেলার এই প্রকল্পের ১২টি ঘরের মধ্যে ৯টি সাঁওতালদের দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে ২টি প্রকল্পের ১১টি ঘর সাঁওতালদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।