দাম বাড়ায় খামারিরা বিপাকে

উপজেলায় পশুখাদ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনার কারণে গরু বিক্রি কমে গেছে। এসব কারণে খামারিদের লোকসান হচ্ছে।

পশুখাদ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। কমে গেছে গরু বিক্রি। বেড়েছে খামার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও। এসব কারণে লোকসান বেড়ে যাওয়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে গরুর খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান হওয়ায় ১০০টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পশুখাদ্যের দাম না কমালে আরও বেশ কিছু খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গরুর খামারি মোখছেদুল মোমিন জানান, করোনাকালে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছরের শুরুতে এ অঞ্চলের খামারগুলোতে দেখা দেয় লাম্পিং রোগ। এ সময় বেশ কিছু গরু মারা যায়। এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে পশুখাদ্যের দাম। পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় লোকসানের মুখে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।

সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি মহল্লায় অবস্থিত মেসার্স ইউসুফ ডেইরি ফার্ম ও হৃষ্টপুষ্ট খামারের মালিক জামিল আশরাফ মিন্টু বলেন, ‘আমার খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। খামারে সব সময় ২০০ থেকে ২৫০টি গরু থাকে। কিন্তু পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর কুলাতে পারছি না। ফলে কমিয়ে দিয়েছি পশুপালন।’

কয়েকজন খামারমালিক বলেন, সৈয়দপুরে আগে চালের খুদ কেজি প্রতি বিক্রি ১৪ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। একইভাবে ১২ টাকার ভুট্টা ৩২ টাকা, ৩৮ টাকার অ্যাংকর ডাল ৬৫ টাকা, ৩১ টাকার মসুর ডালের গুঁড়া ৫২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক বস্তা (৫০ কেজি) ফিডের দাম আগে ৭৫০ টাকা থাকলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকা হয়ে গেছে। ২০০ টাকা পণের (৮০টি আঁটি) খড় বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।

জামিল আশরাফ মিন্টু বলেন, একটি গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে ছয় মাস পরিচর্যা করতে হয়। এ সময় একেকটি গরু খাবার খায় ৩০ হাজার টাকার। অথচ এক লাখ টাকার একটি গরু ৮০ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে দুই দিক থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন খামারিরা।

সৈয়দপুর উপজেলার কয়েকজন খামারি বলেন, ২০১৯ সালের আগে প্রতিদিন পাঁচ–ছয়টি ট্রাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার গরু উপজেলার বিভিন্ন খামার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো। এখন সপ্তাহে মাত্র এক দিন দুটি ট্রাকে ৪০ লাখ টাকার গরু বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

উপজেলা শহরের কয়েকজন খামারি বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে একটি খামারে সব খরচ বাদ দিয়ে তিন লাখ টাকা লাভ থাকত। এখন প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, গরু পালনের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় সৈয়দপুরে উপজেলায় ২৭৮টি গরু খামার গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৭৪টি। বাজারে পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা এখন বিপদে পড়েছেন।

পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সৈয়দপুর শহরের আজিজুল ইসলাম তাঁর খামারটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দিনের পর দিন লোকসান হওয়ায় তিনি তাঁর খামারটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

ইউসুফ ডেইরি ফার্মের মালিক জামিল আশরাফ বলেন, সৈয়দপুরের খামারগুলো থেকে সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই শ গরু ঢাকাসহ অন্যন্য জেলায় পাঠানো হতো। বর্তমানে ওই সব জেলায় আর গরু চাহিদা নেই। এতে খামারিরা গরু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পশুখাদ্যের দাম বাড়তি হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে দামে। ফলে বেশি দামে গরু সংগ্রহ করতে চান না পাইকারেরা।

রশিদুল হক সরকার নামে অপর এক খামারি বলেন, পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খামারিদের খরচ বেড়ে গেছে। এতে গরু পালন করে তাঁদের লোকসান হচ্ছে। লাভ না হওয়ায় ইতিমধ্যে উপজেলায় ১০০ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পুঁজিসংকটে আছেন বেশির ভাগ খামারি। একে একে তাঁরাও খামার বন্ধ করে দেবেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় কুলাতে পারছেন না খামারিরা। এরই মধ্যে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে খামারিদের। অনেকে খামার বন্ধ করে গরুর ব্যবসা করছেন। তাঁরা এক হাট থেকে গরু কিনে আরেক হাটে বিক্রি করে টিকে আছেন।