‘এক বেলা খাইলে, আরেক বেলায় কী খামু, কোইতাম পারি না। লোকজনের সাহায্য-সহযোগিতায় সংসার চলে। ত্রাণ পাইয়া আমগো কয় দিনের খাওনের য্যামন চিন্তা কমছে, আল্লার কাছে দোয়া করি, য্যারা তেরান দিছে, হ্যারাও জানি চিন্তামুক্ত অয়।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেওয়া খাদ্যসহায়তা পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউয়িনের কন্দ্রকপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন (৬২)। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কামালের সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে আর তিন মেয়ে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গত ২৪ মে থেকে টানা পাঁচ-ছয় দিন উচ্চ জোয়ারে বাড়িতে পানি উঠে ঘরের ভিটা ধুয়ে যায়। বেড়া ছুটে গেছে।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউয়িনের সুলতানী, রূপাপুর, দক্ষিণ রাজাপুর ও কন্দ্রকপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কামালের মতো ২৫০টি পরিবারের হাতে আজ সোমবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ পেয়ে খুশি পরিবারগুলো।
গত শনিবার থেকে ভোলায় অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। এরই মধ্যে ভোলার প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা চাল, আলু, ডাল, তেল, পেঁয়াজের প্যাকেজিং করেছে। এরপর ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে কার্ড বিতরণ করেছেন তাঁরা। এরপর আজ বেলা ১১টায় রাজাপুর ইউনিয়নের সীমানায় ব্লক বাঁধের ওপর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজাপুরের বাসিন্দা পল্লিচিকিৎসক আমির হোসাইন, ভোলা প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি এম আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি ইয়ারুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিয়ান আরিফ, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক জাফর ইসলাম, নারীবিষয়ক সম্পাদক ফেন্সি মনি, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আর জে শান্ত, সদস্য মো. শুভ, এম এ আজিজ, মনিরুল ইসলাম, ইসমাইল, সৈয়দ হাসনাইন প্রমুখ।
দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের ছালেকা বেগমের (৬০) স্বামী বেঁচে নেই। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ভাঙনে বাড়িঘর সব ভেঙে গেছে। এখন বাঁধের বাইরে সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসত করছেন। কিন্তু জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস এলেই ঘরের ভিটা ডুবে যায়। তাঁরও সংসার চলে চেয়েচিন্তে। প্রথম আলোর ত্রাণ পেয়ে তিনি প্রচণ্ড খুশি বলে জানান।
ভাঙনকবলিত জসিম মাঝি, ছগির মিস্ত্রি, আলাউদ্দিন, রওশনারা বিবি, গিয়াসউদ্দিন, লিটন সরদার, হারেছ মাতব্বর, আলাউদ্দিন চোকিদার, কাঞ্চন পাটোওয়ারী ত্রাণ পেয়ে খুশি। তবে তাঁরা বলেন, বারবার জোয়ার-জলোচ্ছাসে তাঁদের ঘরের ভিটা ভেসে যাচ্ছে। জমিও ভাঙছে। যদি জোড় খাল থেকে পূর্বে দুই কিমি ব্লক বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেয় সরকার, তাহলে তাঁদের এভাবে ভাসতে হবে না।