ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গতকাল শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নেতাদের অভিযোগ, ত্যাগী ও প্রবীণদের বাদ দিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিতে নেতা–কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি।
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জিল্লুর রহমানকে কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় আগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে দলীয় কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, দলের জন্য একাধিক মামলায় জড়ানো ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়েই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিএনপির হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ ও একাধিক সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতারাও বাদ পড়েছেন। কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে কারও কোনো প্রতিক্রিয়া না থাকলেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির দুই নম্বর সদস্য জহিরুল হক বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের এই কমিটিতে রাখেনি কেন্দ্রীয় বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির সময় যথাযথভাবে তা মূল্যায়ন করা হবে। যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে নেতা–কর্মীদের সঠিক মূল্যায়নের অভাব রয়েছে। কারণ, যাঁরা দীর্ঘদিনের ত্যাগী, অনেক মামলা-মোকদ্দমায় আসামি হয়েছেন এবং দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে থাকেন, এমন অনেক নেতা পদবঞ্চিত হয়েছেন। এদিকে যাঁরা দলের মিছিল ও সভায় আসেননি, তাঁদের নামও কমিটিতে রয়েছে। আর কমিটি গঠনের সময় জ্যেষ্ঠতা-কনিষ্ঠতাও মানা হয়নি। এসব কারণে চাপা ক্ষোভ আছে। তাঁরা কেন্দ্রীয় বিএনপির সঙ্গে কথা বলে এসব সমন্বয় করার চেষ্টা করবেন।
দলীয় কর্মীরা বলেন, কমিটিতে জিল্লুর রহমান বাদে বাকি ৩০ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া কাজী নাজমুল হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটিতে জয় পায় বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির সাংসদ। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও একই আসনে একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির সাংসদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে সাবেক সাংসদ আবদুল খালেক অংশ নেন।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে বিএনপির পাঁচবারের সাংসদ হারুন অর রশিদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনে বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন হাজারী তাঁদের কাউকেই বিএনপির নবঘোষিত ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৬ মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তে লক্ষ্মীপুরের সাবেক সাংসদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আবদুল আওয়াল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনে বিএনপির তৃণমূল নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে যান। তাঁরা জেলায় মাঠপর্যায়ে একটি জরিপও করেছেন। এসবের ভিত্তিতেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নিয়মমাফিক এই কমিটি করা হয়েছে। কাজ অনুযায়ী কমিটিতে যেখানে আমাকে রাখা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। আর এক কমিটি দিয়ে তো সারা জীবন চলবে না। নতুন কমিটিকে মেনে নিতে হবে।’