তৃতীয় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ স্ত্রীকে খুনের পর আশ্রয় নিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে

সোহাইল আহমেদ ও নাহিদা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে করেছেন চারটি। থাকতেন চতুর্থ স্ত্রীর সঙ্গেই। কিন্তু সন্দেহ করতেন চতুর্থ স্ত্রীকে। একদিন কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে চতুর্থ স্ত্রীকে খুন করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃতীয় স্ত্রী। খুনের পর আশ্রয় নেন দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে।

এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের রহমানবাগ আবাসিক এলাকায়। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সোহাইল আহমেদ। পেশায় পোশাকশ্রমিক তিনি। সোহাইলের হাতে খুন হওয়া চতুর্থ স্ত্রীর নাম লাকী আক্তার।

গত বছরের ২১ জুলাই নগরের হালিশহর রহমানবাগ আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতপরিচয়ের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। কিন্তু রহস্যের কিনারা করতে পারেনি। সোহাইল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।

ঘটনার প্রায় ১৬ মাস পর পুলিশ সোহাইলকে বাগেরহাট থেকে গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রাম থেকে একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর আরেক স্ত্রী নাহিদা আক্তারকে। দুজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ মাস পর খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত হয় নিহত নারীর।

পুলিশ জানায় খুনের সময় সোহাইলের সঙ্গে ছিলেন তৃতীয় স্ত্রী। সে সময় তিনি কোনো বাধা দেননি। খুনের পর চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাটে আশ্রয় নেন দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারিশ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার সোহাইলের চার স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী বাগেরহাটে ও তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তার নগরের পতেঙ্গায় থাকেন। আর চতুর্থ স্ত্রী লাকী আক্তারকে নিয়ে হালিশহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন সোহাইল। সোহাইল, লাকী ও নাহিদা তিনজনই নগরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ২০১৬ সালে নাহিদাকে বিয়ে করেন সোহাইল। গত বছরের শুরুতে বিয়ে করেন লাকীকে।

হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেছেন লাকীর সঙ্গে সোহাইলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে লাকীকে মারধর করেন সোহাইল। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে গলায় ওড়না ও কাপড় পেঁচিয়ে খুন করা হয় লাকীকে। বিছানার চাদর মুড়িয়ে লাকীর লাশ বাসার রান্নাঘরে রেখে পালিয়ে যান সোহাইল ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী।

ওসি আরও বলেন, সোহাইল পেশায় পোশাকশ্রমিক হলেও ধূর্ত প্রকৃতির। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেন। খুনের ঘটনার পর পালিয়ে চলে যান নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, এরপর বাগেরহাটে। নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোনের সিম পরিবর্তন করেন। পুলিশ সোহাইলের ছবি সংগ্রহ করে বাসাটির তত্ত্বাবধায়ক নুর নবীকে দেখালে তিনি রেজাউল করিম পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেওয়া ব্যক্তিকে সোহাইল বলে চিহ্নিত করেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত পাঁচটি সিম পরিবর্তন করেন তিনি। প্রথম ব্যবহৃত মুঠোফোনের নম্বরের সূত্র ধরে সোহাইলকে শনাক্ত করা হয়।