তুলি ও ক্যামেরায় সফল এক শিল্পীর কথা
‘ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। আত্মবিশ্বাস থাকলে এবং নিজের কাজটা ঠিকমতো করে গেলে সফলতা ধরা দেবেই’, বলছিলেন তরুণ চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রী আশিকুজ্জামান চৌধুরী। সবার কাছে রক্তিম নামে তিনি পরিচিত। চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রী হিসেবে নাম করলেও এই দুই মাধ্যমের কোনোটিতেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
গত শুক্রবার ঢাকায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে। আশিকুজ্জামানের জন্ম ফরিদপুর সদরের কমলাপুরে, ১৯৯০ সালে। তিনি ফরিদপুরেই থাকেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে আশিক বড়। ফরিদপুরের তারার মেলা স্কুল এবং ফরিদপুর জেলা স্কুলের পাঠ শেষ করে মানবিক বিষয় নিয়ে ভর্তি হন সরকারি ইয়াসিন কলেজে। আর সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করেন। আশিক বললেন, ‘ইচ্ছে ছিল চারুকলায় পড়ব, কিন্তু পারিবারিক কারণে পারিনি।’
তাই বলে তাঁর সৃজনশীলচর্চা সেখানেই থেমে যায়নি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর আঁকাজোখার প্রতি তীব্র আগ্রহ। সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ফরিদপুর শিশু একাডেমিতে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার শেখানোর পদ্ধতি তাঁর ভালো লাগেনি। ছেড়ে দিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে উঠে তিনি পান তারার মেলা স্কুলের অঙ্কন-শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম তাতাকে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ‘তাতা স্যার’ই আশিকের শিক্ষক। আশিক বললেন, ‘ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে তাতা স্যারের কাছে ছবি আঁকা শিখতে যেতাম। স্যারও আমার আগ্রহ দেখে আমাকে বেশি সময় দিতেন। ২০০৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর স্যার আমার কাছ থেকে আর কখনো টিউশন ফি নেননি।’
আশিকুজ্জামান প্রধানত জলরঙে কাজ করেন। সিটিস্কেপ, নগর ও গ্রামীণ জীবন এবং নৈসর্গ তাঁর ছবির উপজীব্য। তিনি এখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ছবি আঁকেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও দেশে-বিদেশে চিত্রকর্ম বিক্রি করছেন। চিত্রকর্মে ভর করেই আশিক এখন স্বাবলম্বী। তাঁর আঁকা ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে।
অষ্টম-নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আশিকের আলোকচিত্রের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। তিনি বললেন, ‘তখন পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়া আলোকচিত্র দেখতাম। কিংবদন্তি আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের তোলা ছবি আমাকে বিশেষ ভাবে টানত। আলোকচিত্রকর্মে আলো-ছায়ার কী অসামান্য কারুকাজ! এভাবেই আলোকচিত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে।’
স্নাতকে (সম্মান) পড়ার সময় তিনি বাড়ি গিয়ে শিশুদের অঙ্কন শেখাতেন। সেই টিউশনির টাকা দিয়ে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা হয়। তারপর থেকে তুলির পাশাপাশি চলছে তাঁর ক্যামেরাও। তাঁর আলোকচিত্রের প্রতিপাদ্য, মানুষের জীবনযাপন। প্রকৃতিও উঁকি দেয় তাঁর লেন্সে। তাঁর তোলা আলোকচিত্রকর্মও দেশে-বিদেশে প্রদর্শিত হয়েছে।
সম্প্রতি ফরিদপুরে ‘রঙের খেলা’ নামে একটি আর্ট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন আশিকুজ্জামান। সে সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘আমি চাই সৃজনশীলচর্চা ছড়িয়ে পড়ুক। সে উদ্দেশ্যেই এই একাডেমির যাত্রা।’ এই একাডেমি একদিন অনেক বড় হবে—এমন স্বপ্নও তিনি দেখেন।