তিন মাস ধরে বেতন না পেয়ে কষ্টে দিন কাটছে দীঘিনালার ২৮৫ পাড়াকর্মীর

খাগড়াছড়ি জেলার মানচিত্র

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের ২৮৫ জন পাড়াকর্মী তিন মাস ধরে বেতন–ভাতা পাচ্ছেন না। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। অনেক কর্মী ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না।

প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় দীঘিনালার পাঁচটি ইউনিয়নে ২৫৯টি পাড়ায় ২৫৯ জন পাড়াকর্মী ও তাঁদের নিয়মিত তদারকির জন্য ২৬ জন মাঠ সংগঠক রয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তাসহ চারজন কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। পাড়াকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পাড়াকর্মীরা মাসে ৬ হাজার ৫০০ টাকা ও মাঠ সংগঠক ১০ হাজার টাকা বেতন–ভাতা পান। আগে নিয়মিত বেতন–ভাতা পেলেও ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন বন্ধ রয়েছে।

প্রকল্পের উপজেলা কর্যালয়ের দপ্তর সহায়ক স্বপ্না চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাসে ১৬ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার স্বামী রুপায়ণ চাকমা দিনমজুরির কাজ করেন। আমি বৈসাবি উৎসবের বোনাসও পাইনি। ঋণ করে কোনো রকম সংসার চালাচ্ছি।’

কাঁঠালতলী পাড়াকেন্দ্রের পাড়াকর্মী ডলি রাণী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী নেই, আমি পাড়াকর্মীর বেতন–ভাতার ওপর নির্ভরশীল। আমার এক ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, আরেক ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তিন মাস ধরে বেতন–ভাতা বন্ধ থাকায় এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও একটি স্মার্টফোন বিক্রি করে কোনোরকমে সংসারের খরচ ও ছেলের এসএসসির ফরম পূরণ করেছি। বেতন–ভাতা পেলে অনেক উপকার হতো।’

সুধীর মেম্বারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাঠ সংগঠক লয়ামতি ত্রিপুরা বলেন, তাঁদের বেতন বন্ধ থাকলেও কাজ বন্ধ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে যাচ্ছেন। ১০ হাজার ৫০০ টাকা বেতন দিয়ে সংসার চলে। এক মেয়ে ঢাকা ইডেন কলেজে ও ছেলে দীঘিনালা সরকারি কলেজে পড়ে। তিন মাস ধরে বেতন না পেয়ে কিভাবে যে কষ্টে দিন কাটছে, বোঝাতে পারবেন না।

রাজেন্দ্র কারবারিপাড়ার পাড়াকর্মী ফুল কুমারি ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার এক ছেলে এবার ঢাকা নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। আরেক ছেলে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছে। সংসারের খরচ, ছেলেদের পড়াশোনা—সব আমার বেতনের টাকাই ভরসা। বেতন না পেয়ে তিন মাস ধরে অনেক কষ্টে দিন কাটছে।’

উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান বলেন, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠক হিসেবে যে নারীরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা অধিকাংশই দরিদ্র। তাঁরা প্রকল্পের বেতন–ভাতার ওপর নির্ভরশীল। তিন মাস ধরে তাঁদের বেতন–ভাতা বন্ধ থাকা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে মানবিক বিবেচনায় দ্রুত তাঁদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করে দেওয়া।

টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের উপজেলা ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাড়াকর্মী, মাঠ সংগঠকদের বেতন–ভাতার বরাদ্দ না আসায় তাঁদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ এলে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি বেতন–ভাতার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।