তাদের ঘরে অটিজম জয়ের আনন্দ
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মো. সিরাজুম মুসাউয়ির চৌধুরী ইলহাম। ছোট্ট ইলহামকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন তাঁরা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে ইলহামের আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। একদিন নিশ্চিত হন অটিজমের প্রভাব রয়েছে তার। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারটির। শেষে মন শক্ত করে নামেন অটিজম জয়ের সংগ্রামে। শুরু হয়েছে সেই সংগ্রামের সাফল্য আসা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো ইহলাম। ফিকে হওয়া স্বপ্নটি নতুন করে উঁকি দিতে শুরু করেছে।
খুশির সীমা নেই ইলহামের পরিবারের। একই কারণে আনন্দের জোয়ার যেন কাব্য চৌধুরী, সাদমান তাসনিম, সুজয় মজুমদার ও ইকরা বিনতে জাহাঙ্গীরের ঘরেও। এই চার শিশুও এবার সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্যে শেষজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। অপর তিনজন অটিজম আক্রান্ত।
গত মঙ্গলবার সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল বের হয়। তাতে ইলহাম জিপিএ-৪ দশমিক ৬৬ এবং কাব্য ৩ দশমিক ৩৩ পেয়েছে। সাদমান তাসনিম ২ দশমিক ৭৫ এবং সুজয় মজুমদার পেয়েছে ৩ দশমিক ৬৩। শারীরিক প্রতিবন্ধীও ইকরা বিনতে জাহাঙ্গীর পেয়েছে ৩ দশমিক ৮৬। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব শিশুর অর্জন পরিবারকে আন্দোলিত করতেই পারে।
ইলহামের বাবা ইউসুফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল করেছে। চার বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে। এ জন্য অনেক খুশি। সে এখন স্বাভাবিকদের সঙ্গে পড়ছে। কোনো সমস্যা নেই।’
ইলহাম পড়ত বিএমএ গ্রিন হিল ইংলিশ স্কুলে। পরীক্ষা দিয়েছে ভাটিয়ারি টিএসসি বিদ্যালয় থেকে। পরীক্ষা দিয়েছে স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে। অতিরিক্ত সময়ও নেয়নি সে।
কাব্য চৌধুরী পরীক্ষা দেয় প্রবর্তক বিদ্যাপীঠ থেকে। সে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। পরীক্ষা পাসের সঙ্গে আরও একটি খুশির খবর রয়েছে কাব্যের, সে এবার সরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।
তাঁর মা চম্পা ঘোষ বলেন, ‘ছেলে পাস করায় খুবই খুশি। সে নিজেও খুশি। সরকারি স্কুলের পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে। এখন কোথায় ভর্তি করাব ভাবছি।’
দুই ভাইয়ের মধ্যে কাব্য চৌধুরী বড়। সে এখন অনেক সুস্থ। সে পরীক্ষা দিয়েছে অতিরিক্ত সময় না নিয়েই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়।
ছেলে পাস করায় একইভাবে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে সাদমান তাসমিনের বাড়িতেও। তার বাবা ব্যবসায়ী শফিক উদ্দিন ও মা তৌহিদা বেগম ছেলের সাফল্যে খুশি। রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি বিদ্যালয়ের ছাত্র সাদমানের গৃহশিক্ষক সোনিয়া আকতার বলেন, ‘সাদমানেরা দুই বোন, এক ভাই। ছেলের সাফল্যে আমরা অনেক খুশি।’
সাদমান ও সুজয় মজুমদার পরীক্ষা দিয়েছে ছায়া শিক্ষক এবং অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় নিয়ে। সুজয় মজুমদার সমাপনী পরীক্ষায় বসেছে ড্রিম স্টারস স্কুল থেকে।
অটিজম আক্রান্ত এসব শিশুরা সবাই নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থী। সপ্তাহে তিন দিন নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনে নানা চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে তারা থাকত। এভাবে অনেক শিশু এখন মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। উত্তীর্ণ তিন শিক্ষার্থীকে অটিজম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
নিষ্পাপের নির্বাহী সভাপতি ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বাসনা মুহুরী বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নার্সিং করলে সুস্থ হয়। তাদের মূলধারায় ফেরানো যায়।