ঢাকার ধামরাই: বন্ধের ১ সপ্তাহ না যেতেই ছয়টি ইটভাটা চালু
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর অবৈধ ছয়টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই এসব ভাটা আবার চালু করেছেন মালিকেরা। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিন ঘুরে এর সত্যতা পেয়েছেন।
ভাটাগুলো হলো জয়পুরা এলাকার নির্বাণ, ইউনিক ও কেবিসি ব্রিকস এবং দেপশাই এলাকার বাংলা, সুপার ও মা ব্রিকস। এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র নেই। এর কোনোটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। কোনোটি তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে।
ধামরাইয়ের আইনজীবী পলাশ ঘোষ বলেন, যেখানে–সেখানে ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটার মালিকেরা আইন অমান্য করে অবৈধভাবে ইট পোড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কয়েক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েই তাঁরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বন্ধ করে দেওয়া ভাটা আবার চালু করছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বায়ুদূষণ রোধে অবৈধভাবে পরিচালিত ওই ভাটাগুলোয় ২১ ডিসেম্বর অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। সে সময় এসব ভাটাকে ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা করে আদায় করা হয়। ইট পোড়ানো বন্ধ করতে আগুন নিভিয়ে ভাটাগুলোর স্থাপনার আংশিক ভেঙে দেওয়া হয়।
কিন্তু গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ছয়টি ভাটাতেই ইট পোড়াতে দেখা যায়। দেখে মনে হয়নি এসব ভাটা বন্ধে কয়েক দিন আগে অভিযান চালানো হয়েছে।
বন্ধ করা ইটের ভাটা চালু করা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আবার অভিযান চালানো হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসাইন মোহাম্মেদ বলেন, বন্ধ করা ইটের ভাটা চালু করা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আবার অভিযান চালানো হবে।
শোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্র, দেপশাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার ও একটি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের আধা কিলোমিটারের মধ্যে সুপার ব্রিকসের অবস্থান। বুধবার ভাটাটিতে ইট পোড়াতে দেখা যায়।
ভাটাটির মালিক মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁর ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আগে থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ থাকায় তিনি ভাঙা অংশ মেরামত করে ভাটা চালু করেছেন।
সুপার ব্রিকস থেকে এক কিলোমিটার দূরে আবাসিক এলাকার মধ্যে ইউনিক ব্রিকস অবস্থিত। তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা এই ভাটাটিতেও ইট পোড়ানো হচ্ছে।
ভাটার ব্যবস্থাপক রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, অভিযানের পর ভাঙা অংশ মেরামত করে রোববার থেকে ভাটা চালু করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া অন্য সব ভাটায়ও ইট পোড়ানো হচ্ছে।
একই দিন অন্য চারটি ভাটায় গিয়েও ইট পোড়াতে দেখা যায়। তবে এসব ভাটায় মালিক বা ব্যবস্থাপক কাউকে পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।
ধামরাইয়ের ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান বায়ুদূষণ রোধে কোনো ভূমিকা রাখছে না। অভিযানের পরপরই ভাটার মালিকেরা ইট পুড়িয়ে আগের মতোই দূষণ করে চলেছেন।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ ধামরাইয়েও কাজ করে। এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরিমানা করে ও আংশিক ভেঙে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, অবৈধ ভাটা বন্ধ করতে হলে চুল্লি, চিমনি ও অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ভাটার মালিককে আইনের আওতায় নিতে হবে। ভাটাগুলো তদারক করতে হবে। তবেই অভিযানের সুফল আসবে।হ