ডিলার নিয়োগ ইউনিয়নে, সার বিক্রি পৌর শহরে

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১০ জন বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে সার বিক্রি না করে তা করছেন পৌর শহরে। এতে সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তিসহ অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষকেরা যেন সহজে হাতের নাগালে সঠিক দামে সার কিনতে পারেন, এ জন্য সরকার উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নে ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে মেসার্স হারুন সার বিতান, রাধানগরে মেসার্স কুণ্ডু ট্রেডার্স, লোহানীপাড়ায় মেসার্স শান্তি সার বিতান, মধুপুরে মেসার্স ফজলে রাব্বি সুইট, বিষ্ণুপুরে মেসার্স বদরগঞ্জ সার বিতান, দামোদরপুরে মেসার্স আহাম্মদ উল্লাহ সার বিতান, কালুপাড়ায় মেসার্স সুলতানা সার বিতান, কুতুবপুরে মেসার্স সার বিপণি, গোপীনাথপুরে মেসার্স আকবর হোসেন তালুকদার ও গোপালপুরে মেসার্স নীলু ব্যানার্জী। এ ছাড়া পৌরসভায় সার ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে মেসার্স তানহা ট্রেডার্স।

অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ পাওয়া ডিলাররা কেউই ইউনিয়নে গিয়ে সার বিক্রি করছেন না। তাঁরা সবাই বদরগঞ্জ পৌরসভায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে সার বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড পৌর শহরে সারের দোকানে ঝুলিয়েছেন।
বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ ইউনিয়নে থেকে সার কিনতে পারলে তাঁদের দুর্ভোগ কমত। পরিবহন খরচ ও সময় কম লাগত। পৌরসভার খুচরা দোকানগুলোয় সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সার কিনতে হয় তাঁদের।

কালুপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি গ্রামের কৃষক শাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘হামরা কখনো ইউনিয়নে সার কিনবার পারি নাই। ইউনিয়নের ডিলারের চেহারাও দেখি নাই। ১০ মাইল দূরে বদরগঞ্জ হাট (পৌরসভা) থাকি সার কিনিয়া আনি। তাতে সমায় বেশি নাগে, ভ্যানোত আনতে খরচও বেশি হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালুপাড়ার বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলারের নাম সুলতানা আখতার। তাঁর বাড়ি রংপুর সদরের মমিনপুর ইউনিয়নে। তিনি মমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, সব সময় ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমার সার ইউনিয়নে বিক্রি করছে কি না, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

দামোদরপুরের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আখেরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের ডিলার আহাম্মদ উল্লাহ মারা গেছেন আট মাস আগে। তাঁর নামে সার উত্তোলন করে কোথায় বিক্রি করা হচ্ছে, তা জানি না। তবে গত সপ্তাহে চার বস্তা ইউরিয়া সার (প্রতি বস্তা ৮৬০ টাকা দরে) পৌর শহর থেকে কিনে আমন খেতে প্রয়োগ করেছি।’

জামুবাড়ি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘দুই দিন আগোত এক বস্তা ইউরিয়া বদরগঞ্জহাট থাকি ৯০০ টাকা দিয়া কিনছি।’

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সমছের আলী (৪৫) বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন থেকে বদরগঞ্জ পৌরসভার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। ডিলার ইউনিয়নে সার বিক্রি করলে খুব সুবিধা হতো।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া সারের সরকারনির্ধারিত দাম ৮০০ টাকা। এর বেশি দামে কেউ বিক্রি করতে পারবেন না।
বদরগঞ্জ পৌর শহরের তালুকদার মার্কেটের একটি দোকানে সার বিক্রি করছে বিসিআইসি ডিলার মেসার্স আকবর হোসেন তালুকদার অ্যান্ড সন্স। দোকানের সামনে ঝোলানো সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, হ্রাসকৃত মূল্যে ভর্তুকি সার, বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন।’ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড পৌর শহরে ঝুলিয়ে সার বিক্রি করার বিষয়ে দোকানের ব্যবস্থাপক সুব্রত সরকার বলেন, ‘গোপীনাথপুর ইউনিয়নেও আমাদের সার বিক্রি করার দোকান আছে। মাঝেমধ্যে সেটা খোলা হয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন খুচরা সার ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ৮০০ টাকায় কিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করছি।’

রামনাথপুর ইউনিয়নের ট্যাক্সেরহাট গ্রামের কৃষক অলিউল ইসলাম বলেন, ‘ডিলার ইউনিয়নে সার বিক্রি করলে আমরা সহজে সার কিনতে পারতাম।’ ওই ইউনিয়নের নিযুক্ত ডিলার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সব ডিলার পৌর শহরে সার বিক্রি করছেন, আমিও করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, ‘অবশ্যই যে যে ইউনিয়নের ডিলার, তাকে সেই ইউনিয়নে গিয়ে সার বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’