ইন্দুরকানি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ডায়রিয়ার চিকিৎসা বাড়িতে
হাসপাতালে অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। লক্ষাধিক মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানির উপজেলার সাঈদখালী চরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ঘরামী (৩৫) গত শুক্রবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেননি। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাড়িতেই চিকিৎসা নেন। চার দিন পর কিছুটা সুস্থ হন রফিকুল ইসলাম।
সামর্থ্য না থাকায় রফিকুল ইসলামের মতো ইন্দুরকানি উপজেলায় এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত চার শতাধিক লোক ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পরও সরকারি হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে চিকিৎসাসেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমান বলেন, হাসপাতালে অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়ার রোগীদের ওষুধ লিখে দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আর গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের পিরোজপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তৈয়বুর রহমান আরও বলেন, শুরু থেকে হাসপাতালে সুপেয় পানি সরবরাহ না থাকায় অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি। এখানে গভীর নলকূপ বসানো যায়নি।
পিরোজপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত এক মাসে ৯৩৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ২৬ জন, নাজিরপুরে ১৪, নেছারাবাদে ৩১, কাউখালীতে ৪, ভান্ডারিয়ায় ২৬ ও মঠবাড়িয়ায় ২৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা কম থাকায় রোগীদের মেঝেয় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ইন্দুরকানি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর কোনো পরিসংখ্যান নেই।
২০০৩ সালে উপকূলীয় ইন্দুরকানি উপজেলায় ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। ২০০৮ সালের নভেম্বরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলেও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়নি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শুধু সুপেয় পানি সরবরাহ নিয়ে জটিলতার কারণে ১২ বছর ধরে হাসপাতালে অন্তর্বিভাগ চালু করা হয়নি।
বর্তমানে হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কর্মরত আছেন দুজন চিকিৎসক। এর মধ্যে চারটি জুনিয়র কনসালট্যান্টে মেডিসিন, শল্য, গাইনি ও অবেদনবিদের পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অন্তর্বিভাগ চালু না হওয়ায় রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক রোগী ১৬ কিলোমিটার দূরে পিরোজপুর সদর হাসপাতাল এবং বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ চালুর জন্য তিনি স্থানীয় সাংসদসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। হাসপাতালে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাচ্ছে না বলে পানির সমস্যা রয়েছে। পানির সমস্যা দূর হলে অন্তর্বিভাগ চালু করা যাবে।
সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ বলেন, সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে অন্তর্বিভাগ চালু করা যাবে।