ঝালকাঠিতে উদ্ধার লাশটি অভিযান-১০ লঞ্চের বাবুর্চির
ঝালকাঠি সদরের চর সাচিলাপুরে বিষখালী নদী থেকে আজ সোমবার উদ্ধার হওয়া মৃত যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম মো. শাকিল (৩২)। তিনি গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আগুন লাগা অভিযান–১০ লঞ্চের বাবুর্চি ছিলেন। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইর গ্রামে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পাঠানো ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেছেন নিহত শাকিলের বোন সাহিদা আক্তার। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দলনেতা শহিদুল ইসলাম। শাকিলের লাশ গ্রহণ করার জন্য ফতুল্লা থেকে তাঁর দুই মামা ঝালকাঠিতে রওনা হয়েছেন।
নিহত শাকিলের বোন সাহিদা আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই অবিবাহিত। সে সুন্দরবন-১০, ঈগল-২ লঞ্চসহ বিভিন্ন লঞ্চে ছয় বছর রান্নার কাজ করেছে। অভিযান–১০ লঞ্চে গত এক মাস সে কাজ করছে, এটা আমরা জানতাম না। আগুনের খবর শুনে ভাইয়ের বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি, সে এই লঞ্চে ছিল। আজ টিভিতে লাশ উদ্ধারের খবর জেনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই, সে আমার ভাই।’
সাহিদা আক্তার বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের মা–মেয়ের সংসার ভাই শাকিলই চালাত। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার অসুস্থ মাকে কে দেখবে এখন?’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দলনেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, লাশের ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠালে তাঁরা নিশ্চিত করেন, এটি লঞ্চের বাবুর্চি মো. শাকিলের লাশ। পরিবারের লোকজন এলে প্রশাসনের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
আজ সকালে সদরের ধানসিঁড়ি চরসাচিলাপুর এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিরা বিষখালী নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পরে রাজাপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
এদিকে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসন থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী, এখনো নিখোঁজ আছেন ৩৩ জন। কিন্তু ঝালকাঠি রেড ক্রিসেন্টের তালিকা অনুযায়ী, ৫১ জন নিখোঁজ আছেন। আবার থানা–পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ আছেন ৪০ জন।
এদিকে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দলকে অভিযান থেকে বাদ দিয়ে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২ জনের একটি ডুবুরি দল দিয়ে সারা দিন সুগন্ধা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, ডুবুরি দল বরিশাল থেকে সকাল নয়টায় এসে বিকেল পাঁচটায় চলে যায়। ডুবুরির দল যদি ঝালকাঠিতে অবস্থান করে অভিযান চালায়, তাহলে হয়তো আরও কয়েকজনের লাশ উদ্ধার হতে পারে।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, উদ্ধার হওয়া যুবকের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে আজ দুপুর থেকে ঝালকাঠি পৌর মিনি পার্কে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নিখোঁজ স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি বুথ স্থাপন করেছে। সেখানে একাধিক স্বজন তাঁদের ডিএনএ দিয়েছেন। ঢাকা ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল এখানে কাজ করছেন। বরিশাল সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ তাঁদের সহায়তা করছেন।
ঝালকাঠি সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অরিদ সরকার বলেন, অভিযান–১০ লঞ্চের যাত্রীদের অধিকাংশ বরগুনা জেলার। তারপরও রাত আটটা পর্যন্ত এখানে আসা স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জানানো হবে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘বরগুনা জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো তালিকা চূড়ান্ত ধরেই আমরা কাজ করছি। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার মাধ্যমে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।’