জ্বর-সর্দিতে ভোগা অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে যা হলো
কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক অ্যাম্বুলেন্সচালক আক্রান্ত হন জ্বর ও সর্দিতে। এরপর কর্তৃপক্ষ তাঁকে তিন দিনের ছুটি দেয়। ছুটি পেয়ে তিনি যান জেলার তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জ্বর-সর্দি করোনার উপসর্গ হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কোয়ারেন্টিনে রাখে। এই খবর পৌঁছে যায় এলাকাবাসীর কাছে। এরপর যা হয়েছে, তা অমানবিকই বটে।
করোনা হয়েছে সন্দেহে এলাকাবাসী তাঁকে হাসপাতাল ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়। চালকের জীবন রক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা। প্রতিকার পেতে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনা হয়। কিন্তু কিছুতেই স্থানীয়দের চাপ সামলাতে পারছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জীবনের ঝুঁকি টের পেয়ে যান চালকের পরিবারের সদস্যরা। শেষে জীবন রক্ষায় আজ শুক্রবার ভোরে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাঁচে পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অমানবিকতার শিকার ওই চালকের ঠাঁই হয়েছে অন্য একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বর্তমানে ওই হাসপাতালে তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন।
মুঠোফোনে চালক বলেন, ‘মরার আগেই মরে গেলাম। মানুষের ঘৃণা আর অমানবিকতা দেখে আর বাঁচতে ইচ্ছা করছে না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ওই চালক প্রেষণে অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলেও তাঁর পরিবার থাকত তাড়াইল উপজেলায়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর ছুটি নিয়ে গত রোববার তিনি তাড়াইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোয়ারেন্টিনে যান। সোমবারই এলাকায় গুজব রটে যায় তাঁর করোনা হয়েছে। এরপর থেকে তাঁর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে এলাকার অনেকে দল বেঁধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে আসেন। তাঁদের দাবি ওই চালককে তাড়াইলে রাখা যাবে না, সরিয়ে দিতে হবে। চিকিৎসকেরা বোঝানোর চেষ্টা করেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটা নিশ্চিত নয়। তারপরও তাঁদের নিবৃত্ত করা যায়নি। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ও সমাজপতির পক্ষ থেকেও একই চাপ আসে।
এই অবস্থায় চালক ভোরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বলেন, ‘স্যার, চলে যাচ্ছি। জীবন বাঁচাতে হবে।’ এ কথা বলে পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। জানা গেছে, পরিবারের সদস্যরা যান একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। তিনি যান মোটরসাইকেলে করে। তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালান।
চালকের বর্তমান কর্মস্থলের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বর ও কাশি থাকায় আমি তাঁকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলেছিলাম। আমার পরামর্শেই পরে হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে যান। কিন্তু এরপর যা হলো, তা মানবতার মধ্যে পড়ে না। করোনা বিষয়ে আমাদের সচেতনতার জায়গাটি এখন যথেষ্ট নয় বলে জীবনের দুর্বল মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মীকে অমানবিকতার একটি খণ্ডচিত্র দেখতে হলো।’
তাড়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হোসাইন আলমাস বলেন, চাপ সহ্য করা যাচ্ছিল না। তাড়াইলছাড়া করার দাবি চারপাশ থেকে আসছিল। এই অবস্থায় তাঁর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হলো কি না, এমন প্রশ্নে হোসাইন আলমাস কোনো উত্তর দেননি। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী তখন এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় তাঁদের হাতে ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।