পদ্মার পারের বাসিন্দা মাত্রই জানেন খরস্রোতা নদীটির চরিত্র। কখনো সে শান্ত, কখনো সে প্রবল স্রোতে উত্তাল। আকাশে মেঘ দেখে বাড়ি থেকে বের হওয়ার কথা ভাবতে হয়। নদীর ভাব দেখে যাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেন বাহন স্পিডবোট, লঞ্চ নাকি ফেরি হবে। এই পথ পারাপারের অভিজ্ঞতা আছে এমন যাত্রীরাই শুধু জানেন এর ঝক্কি ও ঝুঁকি কতটা। আজ থেকে এসবই অতীত। খুলল স্বপ্নের দুয়ার। স্বপ্নের, সক্ষমতার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশের পর মাওয়া প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়েই খুলে গেল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অপরাপর অংশের জন্য সংযোগ, যোগাযোগ ও সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে পদ্মার এ পারে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং অন্য পারে মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরায় আনন্দ উৎসব চলছে। দুই পারেই পৃথক দুটি সুধী সমাবেশ ও জনসভার আয়োজন করা হয়। তবে এ আয়োজনই শেষ নয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশের সব জেলাতেই আনন্দ শোভাযাত্রা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বরিশাল
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বরিশালে উদ্যাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে নগরে পৃথক কয়েকটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বরিশাল জেলা প্রশাসন, নগর ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ সকাল আটটায় বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনস প্রাঙ্গণ থেকে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক এস এম আক্তারুজ্জামান।
সকাল সাড়ে আটটায় পৃথক শোভাযাত্রা বের করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগর পুলিশ লাইনসের ফটক থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে পুলিশ লাইনস সড়ক হয়ে সার্কিট হাউস চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
সকাল নয়টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণ থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে অংশ নেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনারসহ অনেকে।
সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। আগামীকাল রোববার ও পরদিন সোমবার নগরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক শোর মাধ্যমে বাউল গান পরিবেশন করা হবে। একই সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমিতে চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃতি, লোকসংগীত ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
বাগেরহাট
শহরের প্রধান সড়কগুলোয় শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা পরিষদের মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী আনন্দ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় অংশ নেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষর্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার কয়েক হাজার মানুষ। আনন্দ শোভাযাত্রায় সুসজ্জিত পিকআপে বাউলশিল্পীরা পদ্মা সেতুর গান পরিবেশন করেন। শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বাগেরহাটের সাধারণ মানুষেরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস করেন, তাতে জেলা প্রশাসনও শামিল হয়।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতেও উৎসবের আমেজ বইছে। আজ সকালে শহরের বের হয়েছে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। সকাল নয়টায় সার্কিট হাউস এলাকা থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাটি আলাউদ্দিন শিশুপার্ক হয়ে স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিকেলে স্বাধীনতা চত্বরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা, সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে রাত নয়টায় বর্ণিল আতশবাজি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। রংবেরঙের বেলুন, বাঁশি ও ঢাকঢোল পিটিয়ে শোভাযাত্রায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন অংশ নেন।
ঝালকাঠি
সকাল নয়টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে এসে শেষ হয়। জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। এতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন স্তরের প্রায় এক হাজার লোক অংশ নেন।
বরগুনা
বরগুনা সাকির্ট হাউস মাঠে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের লামিয়া নামের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলে, ‘পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের, এই সেতুর ওপর দিয়ে আমরা সহজেই ঢাকা পৌঁছাতে পারব। এখন আর আমাদের এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’
যশোর
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল থেকে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। পরে রওশন আলী মঞ্চে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার প্রদর্শন করা হয়।
দুপুরে যশোর শহরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বিকালে জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইনস থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত নয়টায় যশোর কালেক্টরেট চত্বরে আতশবাজি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
মেহেরপুর
গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মেহেরপুর ও গাংনী শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
এ ছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইলের সখীপুর, নওগাঁ ও নারায়ণগঞ্জে নানা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]