জাহাঙ্গীরনগরে তালা ভেঙে হলে ঢুকছেন শিক্ষার্থীরা, নতুন তালা লাগাচ্ছে প্রশাসন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের তালা ভাঙেন তাঁরা। পরে একে একে সব হলের তালা ভাঙতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের তালা ভাঙার পরপরই নতুন তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
আবাসিক হল খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হল খোলার বিষয়টি আসলে আমাদের হাতে নেই। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত এলে তবেই হল খোলা সম্ভব। আজ উপাচার্যদের সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের সভা রয়েছে। আশা করি সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল খোলা না খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
এর আগে আজ সকাল ১০টা থেকে হল খুলে দেওয়াসহ ৩ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে আবাসিক হলগুলোর দিকে যান তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের অপর দুই দাবি হলো আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করা ও গেরুয়া এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের ফটক চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া।
এর মধ্যে ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে গেরুয়ার এক যুবককে আটকান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাঁকে বেধড়ক মারধর ও তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে আহত অবস্থায় ওই যুবককে গেরুয়া এলাকায় পাঠিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েক নেতা।
এদিকে গেরুয়া এলাকায় শতাধিক পুলিশ টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহিল কাফি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গেরুয়া এলাকায় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ থাকবে।’ গতরাতের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গেরুয়া ফটকে প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে বিষয়ে ভাবছে। আর সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কি না, সে বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সিন্ডিকেট ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন গেরুয়া বাজারে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।