জানাজা শুরুর আগে একজন বললেন ‘জীবিত’, এরপর...
আবদুল হাফিজ (৪০) পেশায় ধান ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গ্রামের এক বাড়ি থেকে কেনা ধান আনতে গিয়েছিলেন। ধান ওজন করতে গিয়ে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। উদ্ধার করে এক পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপর সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামের মানুষ ও পরিবার তাঁকে দাফনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন ছুটে যান তাঁর বাড়ি।
হাফিজেন আত্মীয় আবদুল লতিফ জানান, গ্রামে কেউ মারা গেলে ওই ব্যক্তির পরিবার ও গ্রামের মুরব্বিরা মিলেই জানাজা ও দাফনের সময় ঠিক করেন। সেভাবেই গ্রামের ঈদগাহ মাঠে বিকেলে আসরের নামাজের পর আবদুল হাফিজের জানাজা হবে বলে ঠিক করে সেটি মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। পাশাপাশি আবদুল হাফিজের জন্য কবর খোঁড়া হয় গ্রামের কবরস্থানে।
জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিম আহমদ জানান, তিনিও জানাজায় গিয়েছিলেন। মানুষ যখন জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন অনেকেই ঈদগাহ প্রাঙ্গণে রাখা হাফিজের লাশটি শেষবারের মতো দেখছিলেন। তখন হঠাৎ এক ব্যক্তি জানান, হাফিজের মুখ থেকে লালা পড়ছে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, তিনি জীবিত আছেন। এরপর আরও কেউ কেউ সেটি দেখেন। শুরু হয় হইচই। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন সবাই। পরে সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাঁকে লাশ বহনের খাটিয়ায় করেই নিয়ে যাওয়া হয় এলাকার নোয়াখালী বাজারে। বাজারে তখন হাজারো লোক জড়ো হন। সেখান থেকে একটি পিকআপে করে তাঁকে পাঠানো হয় সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে।
নোয়াখালী বাজারে আবদুল হাফিজকে দেখেছেন জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক নজিবুর রহমান। তিনি হাফিজের জানাজায় যাননি। তবে তাঁর বেঁচে থাকার খবর পেয়ে আরও অনেকের সঙ্গে বাজারে ছুটে আসেন। নজিবুর রহমান বলেন, ‘বাজারে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন। আমি নিজে দেখেছি হাফিজ শ্বাস নিচ্ছেন। তখন তিনি (হাফিজ) চোখ মেলেও তাকিয়ে ছিলেন। পরে তাঁকে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈকত দাশ জানান, আবদুল হাফিজকে তাঁদের কাছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নিয়ে আসা হয়। তবে হাফিজকে তিনি মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। আগের ঘটনার বিষয়ে তাঁকে জানানো হলে সৈকত দাশ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
হাফিজকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময় একই গাড়িতে করে ইউপি সদস্য মহিম মিয়াও সেখানে গিয়েছিলেন। হাফিজ জীবিত ছিলেন, সেটি তিনি নিজে দেখেছন কি না, এমন প্রশ্নে মহিম আহমদ বলেন, ‘আমি দেখিনি। মানুষের ধাক্কাধাক্কি, চাপ ছিল সবখানেই। তবে অনেকেই দেখেছে বলেছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তারও বলেছেন, সে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে।’
হাফিজ জামলাবাজ গ্রামের মালদার আলীর ছেলে। তাঁর পাঁচ সন্তান আছে। পরে রাত আটটার দিকে ওই ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়।