জমির বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাতের অভিযোগ

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় তাছলিমা আক্তার (৩৫) নামের তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী গর্ভপাতের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

গর্ভপাতের শিকার তাছলিমা আক্তার উপজেলার পশ্চিমপাড়া গ্রামের মোক্তার হোসেনের স্ত্রী। হামলায় তাছলিমার শাশুড়ি সুফিয়া বেগমও (৬০) আহত হন। হামলার সময় স্বর্ণালংকারসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেওয়া ও একটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনায় তাছলিমার ভাশুর মনির হোসেন বাদী হয়ে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম ওরফে সুমনসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই পরিবারের অভিযোগ, পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টন-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রতিবেশী চাচাতো ভাইদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটির বিরোধ চলছে। এর জেরে মাসখানেক আগে দুপক্ষের মধ্যে মারামারিও হয়। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার সালিস বৈঠক করেন। সালিসের রায় উপেক্ষা করে মোক্তারসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম। ওই মামলায় মোক্তার বর্তমানে কারাগারে আছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গতকাল রাত ৯টার দিকে সাইফুলের নেতৃত্বে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জন মোক্তারের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা মোক্তারের স্ত্রী তাছলিমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও একটি গৃহপালিত গরু ছিনিয়ে নেন এবং ওই ঘর ভাঙচুর করেন। তখন বাধা দিতে গেলে মোক্তারের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাছলিমার পেটে কিলঘুষি ও লাথি মারা হয়। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে শাশুড়ি সুফিয়া বেগমকেও মারধর করা হয়। হামলাকারীরা ফিরে যাওয়ার সময় একটি ঘরে আগুন দিয়ে যান। এ সময় তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভান। পরিবারের সদস্যরা আহত তাছলিমাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ এন এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়।

তাছলিমার সঙ্গে ঢাকায় যাওয়া স্বজন ইয়াসমিন বেগম জানান, আহত তাছলিমা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা শেষে জানিয়েছেন, তলপেটে আঘাতের ফলে তাঁর গর্ভপাত ঘটেছে। বর্তমানে তাছলিমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, গতকাল রাতের হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।